ইকবাল কবির লেমন, সোনাতলা (বগুড়া)
রণাঙ্গনের অকুতোভয় যোদ্ধা শাহ্ মোখলেছুর রহমান দুলু
দেশমাতৃকাকে বাঁচাতে একাত্তরের রণাঙ্গণে জীবনবাজি রেখে নিজেদেরে সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছিলেন বাংলার সাহসী কিছু কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। তেমনি এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার নাম শাহ্ মোখলেছুর রহমান দুলু। শাহ মোখলেছুর রহমান দুলু’র গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে হলেও তিনি পাশ্র্ববর্তী বগুড়ার সোনাতলায় তিনি অধিকাংশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সোনাতলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর বীরোচিত উপস্থিতি ও সফল অপারেশন পরিচালনার ঘটনা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ দিনে দুপুরে কোম্পানী কমাণ্ডার শাহ্ মোখলেছুর রহমান দুলু গোয়ালা বেশে সোনাতলার সুখানপুকুর স্টেশন এলাকা রেকি করেন। ওইদিন সন্ধ্যার পর তাঁর নেতৃত্বে ৩৩ জন বাছাই করা মুক্তিযোদ্ধা শিহিপুর (বর্তমান সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ স্টেশন) এলাকায় উপস্থিত হন। এছাড়াও ১ শ’ ৫০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধাকে পার্শ্ববর্তি হলিদাবগা চরে প্রস্তুত রাখা হয়। শিহিপুর এলাকায় রেললাইনে ১০ টি এন্টি ট্যাংক মাইন ও ২৫ পাউণ্ড এক্সপ্লোসিভ পেতে রাখে মুক্তিযোদ্ধারা। এর সাথে ৬ শ’ ফুট লম্বা ইলেক্ট্রিক ডেটোনেটারের সাথে তারের সংযোগ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরের দিন বেলা ২টা ৪০ মিনিটে গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে একটি স্পেশাল আর্মি ট্রেন অকুস্থলের কাছাকাছি আসতেই গ্রুপ কমাণ্ডার শাহ্ মোখলেছুর রহমান দুলু রেল লাইনের পাশের একটি বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থেকে দুইটি তারের সংযোগ দিতেই বিকট বিস্ফোরণে ট্রেনটির বেশ কয়েকটি বগি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সেই অপারেশনে ১ শ’ ৩৯ জন পাকসেনা মৃত্যুবরণ করে। চাঞ্চল্যকর এই অপারেশনের সংবাদটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এম. আর. আখতার মুকুল তাঁর চরমপত্র অনুষ্ঠানে পরপর তিনদিন সম্প্রচার করেন। এরপর অক্টোবরের ২০ অথবা ২১ তারিখে মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের উত্তর আউটার সিগন্যালের কাছে দেওয়ানতলা রেলব্রিজ প্রেসার মাইন বিস্ফোরণ করে ধ্বংস করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। শাহ্ মোখলেছুর রহমান দুলু ইলেক্ট্রিক ডেনোনেটারের সাথে তার সংযোগের মাধ্যমে এ বিস্ফোরণ ঘটান। এর পরের দিন তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে এন্টি ট্যাংক মাইন দিয়ে হিয়াতপুর রেলব্রিজের একটি গার্ডার উড়িয়ে দেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ সড়কের তারাগোনা ব্রিজ একই কায়দায় মাইন দিয়ে ধ্বংস করেন। তাঁর নেতৃত্বে একসাথে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা মহিমাগঞ্জ আক্রমণ করেন। তাঁদের ভয়ে পাক হানাদারেরা পিছু হটে গোবিন্দগঞ্জে আশ্রয় নেয়।
জুমারবাড়ী রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ, সোনাতলা পিটিআই এ অবস্থানরত আর্মিদের লক্ষ্য করে কয়েকদিন টানা গুলিবর্ষণ ইত্যাদি তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
পিডিএস/এমএইউ