নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ মার্চ, ২০১৮

‘এখনো কৃষিপণ্য হয়নি পাট,দায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছরেও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি পাট। শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যে পার হয়েছে সময়। এজন্য মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী বলে মনে করছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পাটের উন্নয়ন : গণমাধ্যমের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি। অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।

পাট বিকাশের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, বিশ্বব্যাংকের কিছু প্রেতাত্মা এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে নির্দেশনা দিয়েছেন পাটের বহুমুখী প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের জন্য দুই বছর ধরে ফাইল চালাচালি হচ্ছে, আমি মন্ত্রী হয়েও টেবিলে টেবিলে ঘুরেছি। একজন কর্মকর্তা আছেন; যিনি সার্বক্ষণিক এটা দেখছেন। একবার বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঘুরছেন। ঘুরপাকের মধ্যে দুই বছর কেটে গেছে।

তিনি বলেন, এটা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেলে আছে। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, পাটকেই প্রথম প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য করা হচ্ছে, যার জন্য এত গবেষণা হচ্ছে। অথচ আরো ৪০টি পণ্য প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের ২০ শতাংশ ইনসিটিভ পাচ্ছে। জাতীয় পাট দিবসে দুই বছরের চিঠি চালাচালির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। অর্থমন্ত্রী মনে হয়, পাটের প্রতি একটু বিরূপ।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পাটের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে পাটকে ধ্বংস করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজেএমসির মিলগুলোকে বেসরকারিকরণের নামে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হয়। শর্ত থাকলেও কেউ মিল চালু করেনি। বরং গাছপালা, ঘরবাড়ি বিক্রি করে জায়গা ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৯০ ভাগ বীজ ভারত থেকে এনে পাট চাষ করতে হয়। কিন্তু ’৭৫-এর আগে বাংলাদেশের এই অবস্থা ছিল না। পাট বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল, ওই সময় পাট চাষের বীজ আমরা উৎপাদন করতাম। ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় মিল বন্ধ এবং চাষিদের বীজ উৎপাদনে নিরাশ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ আদমজী জুটমিল ২০০২ সালে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন মিল বন্ধ করতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য। কিন্তু একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারত সরকারকে নতুন পাট মিল চালু করতে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। আদমজী মিল হতে আড়াই লাখ বেল পাট রফতানি হতো, সেটা বন্ধ করতে খালেদাকে টাকা দিলো বিশ্বব্যাংক। আর ভারতকে সেই আড়াই লাখ বেল পাট উৎপাদনের জন্য টাকা দেওয়া হলো। এটাই ছিল বিশ্ব ব্যাংকের চক্রান্ত।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধ মিল চালু করেছেন শেখ হাসিনা সরকার। ৬টি পণ্যে পাটমোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপরই পাটের যে অগ্রগতি, তা সম্ভব হয়েছে। অগ্রগতির পথে ধাক্কা কম আসেনি। ২০১৪ সালে হঠাৎ করে ভারত রফতানিকৃত কাঁচা পাটে বিধিনিষেধ জারি করে। তবে তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত তিন বছরে পাটের অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৫ সালে কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়েছে ৬৮ লাখ বেল, ২০১৭ সালে কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ লাখ বেল। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণে কাজ করছি। গত বছর পাটের পণ্যের বহুমুখীকরণের তালিকা পেয়েছিলাম ১৩৫টি, সেখানে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেটা ২৪০ এসে দাঁড়িয়েছে। এ সময় মন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছর থেকে পাট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর সেরা রিপোর্টার পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার তুলে দেবেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, পাটের বীজ উৎপাদনে আমাদের হাত দিতে হবে। ভারত থেকে পাট বীজ আনা হয়। এটা নিম্নমানের, এখানে আমাদের কাজ করতে হবে। যদিও এটা দেখে বিএডিসি অর্থাৎ কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি ইনস্টিটিউট রয়েছে, সেটাও কৃষি মন্ত্রণালয় দেখে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist