আরিফ মঈনুদ্দীন

  ১৫ মার্চ, ২০২৪

ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব ৯)

তাহারা ফিরিয়া আসিলেন

আজিমুল হক সাহেব দুষ্টুমিছলে বললেন, ঠিক আছে বাবা এই কান ধরলাম তুমি বরং শুরু করো।

রাশেদা আক্তার তৈরি হয়ে বললেন, বলছিলাম কী- তুমি আমাদের দেশে রেখে এসো। ঢাকায় অনেক ভালো ভালো স্কুল আছে। যেখানে ওক্সফোর্ড স্ট্যান্ডার্ডে পড়ানো হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিল নাকি তদারকি করে।

হক সাহেব দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, তোমাদের দেশে রেখে আমি এখানে একা একা কীভাবে থাকব!

তা তোমাকে ছাড়া আমার কি কষ্ট কম হবে। এত বয়স হলো এখনো তোমাকে কয়দিন কাছে না পেলে মনটা ভীষণ রকম ছটফট করে ওঠে। যৌবনের সেই দিনগুলো থেকে এখনকার ছটফটানি কেমন যেন অন্যরকম। দেহের ফাজলামি এখন অনেক কম। শুধুই সান্নিধ্য ভালো লাগে। একসঙ্গে বসে ভাগাভাগি করে সংসারের ভাবনাচিন্তা করি। ছেলেমেয়েদের দিনযাপন নিয়ে আলাপ- সমস্ত টুকিটাকি। আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর বিশেষ করে পরম করুণাময়ের কৃপায় আর্থিক সচ্ছলতা আছে বলে ওসব ভাবতে ভালো লাগারই কথা।

রাশেদা আক্তারকে থামিয়ে দিয়ে হক সাহেব বললেন, দেখো রাসু আরো কিছু দিন আমাকে এখানে থাকতে হবে। তুমি বরং ছেলেদের এখন থেকে একটু বেশি সময় দেবে। ওদের আদরের মাত্রাটা আরেকটু বাড়িয়ে দেবে। এখানকার যাচ্ছেতাই মেলামেশার দিকে ওদের যেন ঝোঁক বেড়ে না যায়। দেশে যাওয়ার কথা আমিও তো ভাবছি। বলতে বলতে হক সাহেবের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। আসলে রাসু দেশকে যারা ভালোবাসে তারা দেশের স্বার্থছাড়া এরকম বিদেশ-বিভুঁইয়ে পড়ে থাকে না। আমরা তো এখন নিজেদের স্বার্থেই মস্তিষ্কের সবগুলো স্নায়ু কাজে লাগাচ্ছি। দেশ থেকে এখানে যে কয়টা বাংলা পত্রিকা আসে, তার প্রায় সবগুলোয় দেখা যায়। হতাশা আমাদের সোনার বাংলাকে গ্রাস করেছে। ওখানে কোনো নিয়ম নেই। কোনো শৃঙ্খলা নেই। সহানুভূতি নেই। নীতি-নৈতিকতা নেই। কেমন যেন একটা ছেরাবেরা অবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিই যেন আমাদের নিয়তি। ভালো মানুষগুলো বন্দি জীবনযাপন করছে। তারা যেন অসুরের হাতে বন্দি। কেউ কিছু বলছে না। শুধুই পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে।

রাশেদা আক্তার বললেন, এমনও তো হতে পারে- এত বেশি খারাপ হওয়াটাও ভালো কিছু-একটা আগমনের লক্ষণ।

তোমার প্রত্যাশা যেন সত্যিই হয়। হক সাহেব স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন।

শুধু আমার কেন। তোমার এরকম প্রত্যাশা করতে ভালো লাগে না?

অবশ্যই লাগে। তবে কথা হলো, দেশে এখন সবকিছুর চূড়ান্ত পরিবর্তন প্রয়োজন। কোথাও ধরে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই- কাঠের ঘুণ যেমন পুরো আসবাবকে ঝাঁজরা বানিয়ে দেয়। স্বদেশের অবস্থাও হয়েছে তেমন। এখন ঘুণ পোকা মারার সময়ই- বলতে বলতে হক সাহেব চরম আক্রোশে নিজের অজান্তেই ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। রাগ এলে অথবা উত্তেজিত হলে তিনি অমনই করেন।

রাশেদা আক্তার বললেন, আহা! করো কী। ঠোঁট তো কামড়ে ছিঁড়ে ফেলবে দেখি।

স্ত্রীর কথার খেই না হারিয়েই হক সাহেব বললেন, আচ্ছা রাসু দেশ সম্পর্কে এত কিছু জানার পরও তোমার দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?

বা রে। ইচ্ছে করবে না কেন। দেশের এই অবস্থার কি পরিবর্তন হবে না? হবে। আমার মনে হয় সেদিন দূরে নয়। কথায় আছে না বাতি নেভার আগে ধপ করে জ্বলে ওঠে। এখনকার অবস্থা হয়তো তেমন কিছু। আর আমাদের দেশের এই অবস্থার জন্যে ১৮ কোটি লোক দায়ী নয়। সামান্য কিছু লোক দেশটাকে রসাতলে নেওয়ার কাজ করছে। এরা সংখ্যায় অল্প হলেও ক্ষমতা কিন্তু তাদেরই হাতে এবং এই ক্ষমতার দাপটে দেশের লোকদের মধ্যে আরও একটি অংশকে এরা ব্যবহার করছে। এই ব্যবহৃত অংশ বিনিময়ে পাচ্ছে কিছু আর্থিক সুবিধা। এই অংশে আছে সাধারণ কিছু টাউট-বাটপার শ্রেণির সামাজিক শক্তি এবং বেশ কিছু সরকারি আমলা। যারা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নিজের জায়া-তনয়াকে পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close