মামুন মুস্তাফা

  ০৫ জানুয়ারি, ২০২৪

আবুবকর সিদ্দিক

গণসংগীতের বিপ্লবী কবি

গণসংগীত আবুবকর সিদ্দিকের স্বাতন্ত্রিক পরিচয়ের এক ব্যতিক্রম মাধ্যম। সাহিত্যের এ দেদীপ্যমান মহাপুরুষ লোকান্তরিত হন গত ২৮ ডিসেম্বর। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ নিবন্ধ

আমাদের সৌভাগ্য যে, আবুবকর সিদ্দিক গান রচনা করেননি। তাহলে তিনি গীতিকবি হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করতেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সেখানেই ঘটত বিপত্তি। বাংলাদেশের সাহিত্যে যশস্বী কবি ও অদ্বিতীয় কথাকার আবুবকর সিদ্দিকের মতো শক্তিমান লেখকের জন্ম নাও হতে পারত। এমন উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। এ ক্ষেত্রে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও আবু হেনা মোস্তফা কামালের কথা বলা যায়। ৪৭-উত্তর বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানকে ওই দুজন কবি সমৃদ্ধ করেছেন নিঃসন্দেহে। ফলে তাদের কবিত্ব শক্তি সাধারণ পাঠকের কাছে ম্লান হতে বসেছে। সেদিক দিয়ে আবুবকর সিদ্দিক বেঁচে গেছেন।

কিন্তু আবুবকর সিদ্দিক যেটা করেছেন, তা হচ্ছে- তিনি কিছু ক্ষোভ ও দ্রোহের সংগীত রচনা করেছেন। যাকে আমরা বলে থাকি গণসংগীত। এখানেও আবুবকর সিদ্দিক সফল। এ ক্ষেত্রেও তিনি প্রাতস্মরণীয় বিপ্লবী কবি। সাধারণত আমরা দেখেছি, যুগে যুগে দেশে দেশে প্রতিটি সংকট মুহূর্তে কবি-সাহিত্যিকরা দেশ ও জাতির দুঃসময়ে কলম ধরেছেন। সেই লেখনী থেকে ঝরে পড়েছে যখমচিহ্ন, ঘটেছে রক্তপাত। তেমনি ষাটের দশকে বাঙালির আত্মপরিচয় নির্ণয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা ছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আবুবকর সিদ্দিক তখন গণসংগীত রচনায় আত্মনিয়োগ করলেন।

তখন তিনি ক্রমাগত লিখে চলেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর বিদ্রোহের দিনপঞ্জি। কবি আবুবকর সিদ্দিকের অধিবাস সে সময় দূর মফস্বল শহর বাগেরহাটে। পড়ান বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে। কিন্তু এই যে কবির বিপ্লবী চেতনা, তার ভিত মূলত প্রোথিত হয়েছিল শৈশবে। যখন তিনি বাবার চাকরি সূত্রে অবিভক্ত বাংলার হুগলি ও বর্ধমানে বাস করতেন। সময়টা ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৮। ওখানে থাকার ফলে রাজনৈতিক আবহের ভেতরেই বিকশিত হয়েছেন কবি। তখন নেতাজি সুভাষ বোস ছিলেন কিশোরদের আরাধ্য নেতা। স্কুল থেকে বন্ধুদের কাছ থেকে ‘জয় হিন্দ’ বলে বিদায় নিতে হতো। আর কংগ্রেস-ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিও ছিল কবির ঝোঁক। বর্ধমান শহরের টাউন হলের রাজনৈতিক সভায় যে চারজন কিশোর উদ্বোধনী সংগীত গাইতেন, তাদেরই একজন ছিলেন কবি আবুবকর সিদ্দিক। নেহরু-গান্ধীর জনসভায় থাকার সৌভাগ্যও হয়েছিল কবির। সেই তখন কংগ্রেসের মিছিলে কিশোর বাহিনীতে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, স্লোগান দিয়েছেন। পরে ৪৭-এর দেশভাগের পটভূমিতে নেহরু-গান্ধী-সুভাষ বোসের দর্শন, বিশ্বযুদ্ধের চাপ, ৭৬-এর মন্বন্তর, দাঙ্গার মতো ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ফিরে এলেন জন্মভিটে বাগেরহাটের বৈটপুর গ্রামে। আর এর কিছুই পরে কবিকে লেখক হয়ে ওঠার ভিত্তি রচনা করে দেয়। এ কথা আবুবকর সিদ্দিক নিজেই বলেছেন স্মৃতিকথায়। সুতরাং বোঝাই যায়, বাম ঘরানার এই কবির পক্ষে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছিল অসম্ভব। ফলে বাঙালির আত্মণ্ডআবিষ্কারে কবিকে লিখতে হয়েছে রুদ্রপদাবলি, গণসংগীত।

এ বিষয়ে আবুবকর সিদ্দিক নিজেই বলেছেন, ‘এ কথা সত্য যে, ৬০-এর দশকে আমি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। কবি বিষ্ণু দের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, তার রাজনৈতিক দর্শন এবং পরে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সখ্যের ফলে আমার অনেক কবিতা, গল্পে রাজনীতি পরোক্ষভাবে ছায়া ফেলে। তবে খুলনা শহরে ষাটের দশকে সৃষ্টি হয়েছিল ‘সন্দীপন’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভেতর দিয়েই সে-সময়ের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের পক্ষে কথা বলত ‘সন্দীপন’। খুলনার গার্লস কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক খালিদ রশিদের নেতৃত্বে এর সঙ্গে তখন যুক্ত ছিলেন সাধন সরকার, হাসান আজিজুল হক, নাদিম মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। এর আগে আমি কলকাতার আন্ডারগ্রাউন্ড বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তখন তা আরো তীব্র হয় এবং গণসংগীত লেখা শুরু করি। একসময় চরমপন্থি নকশাল রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ি। বলা যায়, এ সময় থেকে আমার লেখায় গণমানুষ প্রধান হয়ে ওঠে, ব্রাত্যজন ঠাঁই নেয় আমার সাহিত্যে।’

কবির কণ্ঠে উচ্চারিত যে ‘ব্রাত্যজন’, সেই প্রান্তিক মানুষের অধিকার আর স্বাধিকারের লড়াইয়ে গণমানুষ উপজীব্য হয়ে উঠেছে আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীত। ষাটের দশকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীত মাঠের মজলুমের শানিত অস্ত্র হয়ে দেখা দেয়। রাজনৈতিক এবং গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী ও সাহসী সংগ্রামী যোদ্ধা হিসেবে আবুবকর সিদ্দিক চিহ্নিত হবেন, এ কথা বলতে পারি। মনন-চিন্তায় বিদগ্ধ এ কবি আজীবন সাধারণ মেহনতি মানুষের বিজয় কামনা করেছেন। তাকেই ধারণ করেছেন বিপ্লবী আদর্শের মূলমন্ত্র হিসেবে। আর এজন্যই তার পক্ষে সম্ভব ছিল কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের পাশাপাশি সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও মানুষের সুপ্ত ক্ষোভকে ক্রোধে পরিণত করার জাগরণী-গণসংগীত রচনা করা। তার প্রকাশভঙ্গি, তার ভাষার বলিষ্ঠ শব্দচয়ন এবং সুরের উদ্দীপ্ত প্রেরণাই তাকে রুদ্র স্বর ও সুরের অঙ্গীকারবদ্ধ কলমসৈনিকের পরিচিতি এনে দিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে তপ্ত গোলার মুখেও বনে-জঙ্গলে পালিয়ে যুদ্ধরত মুক্তি সেনাদের জাগিয়ে রাখতে লিখেছেন উদ্দীপনামূলক গণসংগীত। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার রচিত ‘ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল/পাকে পাকে তড়পায় সমকাল’ গানটি বহুবার প্রচারিত হয়েছে এবং এ গানের জন্য রাজাকাররা নিপীড়ন চালিয়েছে তার ওপর এবং যেন ভবিষ্যতে লিখতে না পারেন, সেজন্য ডান হাত তার মুচড়ে দিয়েছিল। এই লড়াকু কবির কয়েকটি গণসংগীতের প্রথম চরণ প্রতিদিনের সংবাদের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

ক. ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল/পাকে পাকে তড়পায় সমকাল

খ. বিপ্লবের রক্তরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে/সর্বহারা জনতার জিন্দাবাদ বাতাসে

গ. পায়রার পাখনা বারুদের বহ্নিতে জ্বলছে/শান্তির পতাকা অজগর নিঃশ্বাসে টলছে

ঘ. পৎ পৎ উৎসাহে পতাকাটা উড়ছে/উদ্দাম সিম্ফনী ঝঞ্ঝায়

ঙ. কালো কালো কংকাল গাইতি চালায়/কালো কালো কংকাল হাতুড়ি পেটায়

আবুবকর সিদ্দিক যত দেশাত্মবোধক এবং গণসংগীত রচনা করেছেন, তার বেশির ভাগই ষাটের এবং সত্তরের দশকেই। মূলত চল্লিশের দশক থেকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ সংগঠিত হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণসংগীত, নাচ, কবিতা এবং গণনাট্যের সূচনা লক্ষণীয়। সেই তখন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, পরেশ ধর, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রমেশ শীল, অচিন্ত্য চক্রবর্তী, আবদুল হাকিম, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, নাজিম মাহমুদ- বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক গণসংগীত রচয়িতার আবির্ভাব ঘটেছিল। আবুবকর সিদ্দিক এদের মধ্যে অন্যতম এবং তার রচিত গণসংগীতের তালিকা নিতান্তই কম হবে না। তার লেখা সেসব গান এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী নানা পর্যায়ের সংগ্রামে রচিত। এসব গণসংগীত সংরক্ষণ করা সচেতন সংস্কৃতিকর্মী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লড়াকু যোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করছি। কিন্তু পরবর্তীকালে কেন আর এমন লেখনী বের হয়নি কবির হাত থেকে? আবুবকর সিদ্দিক নিজেই তার একটি প্রবন্ধ ‘গণসংগীত : সাম্প্রতিক

ভাবনা’তে বলেছেন সেসব কথা-

‘একেবারে বাস্তব সত্য জনগণের শোষণ-পীড়ন-নির্যাতন-প্রতিবাদ লড়াই, এ শক্ত ভিত থেকেই স্বতঃস্ফূর্ত তাগিদে বেরিয়ে আসে গণসংগীত। লড়াকু সংগঠনের অভিভাবকত্বে ঘটে তার নির্মাণ, প্রসার ও প্রচার। গণসংগীতের সফল কার্যকারিতার পেছনে কাজ করে একাধিক যুগপৎ ও উপর্যুপরি প্রক্রিয়া। শাসক-শক্তির দুঃশাসন-অত্যাচার, গণনির্যাতন, অসন্তোষ ও গণবিস্ফোরণ। দরকার যথাযোগ্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক পার্টি, প্ল্যাটফরম, সহযোগী সংগঠন ও নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক।... সবচেয়ে বড় কথা, সব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পক্ষপুট ছিল মার্কসবাদী চেতনাসমৃদ্ধ বাম পার্টিগুলো।’

কবির এই সাংস্কৃতিক উপলব্ধির সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও লক্ষণীয়। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দাঁড়া ভেঙে দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও অস্ত্রবাণিজ্যিক পুঁজিবাদ পৃথিবীটাকে তাঁবেদারে পরিণত করেছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া গরিব দেশগুলোয় ষাটের দশক পর্যন্ত যে বামধারার বিপ্লবী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল, তা মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ উপমহাদেশের ট্র্যাজেডিটা খুব প্রকট।’ কবির এ মূল্যায়ন আজকের প্রেক্ষাপটে সত্য বলেই মানি। আমাদের গণসংস্কৃতির পরিশীলিত যোদ্ধা আবুবকর সিদ্দিক খেদের সঙ্গেই বলেন,

‘...না গায়ক, না লেখক, না সংগঠন (মাঠে ময়দানের মঞ্চ তো দূরের কথা), গণসংগীতের সেই প্রণোদনা বা উন্মাদনা চোখে পড়ে না আর। এখন এসব নিয়ে সেমিনার, লেখালেখি, বই প্রকাশ, সম্মেলন-উৎসব; এসব মধ্যবিত্তীয় ‘অ্যাকাডেমিক এক্সারসাইজ’ হয় বড়জোর। আমার বলার কথা হলো, দেশে গণশোষণ-নির্যাতন চলছে। আমি বেঁচে আছি বটে, কিন্তু সাংগঠনিক ভূমিকা থেকে বিমুক্ত ...।’

তার মানে কবি নিজেদের ব্যর্থতার কথাও বলতে পিছপা হননি। নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করার সাহসী মানুষের অভাব আছে বলেই এখন আর তেমন গণসংগীত আমাদের নজরে আসে না।

সবশেষে আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীত নিয়ে ব্রিটিশ ভারতের সংগীত জগতের দুই দিকপালের উদ্ধৃতি আবশ্যক বলে মনে করছি। একজন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের বরেণ্য গণসংগীত রচয়িতাণ্ডসুরস্রষ্টা সলিল চৌধুরী। তিনি আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীতগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। এই গুণী গণশিল্পী একবার ঢাকায় এসেছিলেন। দীর্ঘ আলাপচারিতার মাঝে এই বাংলার গণসংগীতের বিকাশ ও বিস্তার নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি ‘ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল/পাকে পাকে তড়পায় সমকাল’-এর রচয়িতা কবি আবুবকর সিদ্দিক ও সুরকার সাধন সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিলেন। আরেকজন প্রখ্যাত সুরশিল্পী ও গণগায়ক হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কথা বলতে হয়। আশির দশকে কমরেড হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কলকাতার নাকতলার বাসা ‘জিরনি’তে উপস্থিত হয়েছিলেন কবির বন্ধু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব প্রয়াত কামাল লোহানী। কামাল লোহানীর সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাস পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গণসংস্কৃতির পাশাপাশি হাঁটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীত নিয়ে কথা বলছিলেন। আবুবকর সিদ্দিকের শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস, প্রায়োগিক বলিষ্ঠতা এবং ছন্দময় প্রকাশকে তিনি দারুণভাবে সাধুবাদ দিয়েছিলেন। তবে একটু অস্বস্তি প্রকাশ করেন সাধারণের বোঝার ব্যাপারটা তোলে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মন্তব্য এবং জিজ্ঞাসা- ‘একটু কঠিন হয়ে গেল নাকি’? কিন্তু পরক্ষণেই তিনি আবুবকর সিদ্দিকের শব্দাবলিতে সুরারোপের একটা কেরামতির সন্ধান পেয়েছিলেন। আর ছন্দবদ্ধ শব্দরূপকে সুরারোপ আকর্ষণীয় ও বিপুলভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল বলেই কবির গণসংগীতে অনুপ্রাণিত হয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী; এমন ধারণাই পোষণ করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। ভারতীয় গণসংগীতজগৎ ও প্রগতিশীল সংস্কৃতি আন্দোলনের ওই দুই দিকপাল যে মন্তব্য করেছেন দীর্ঘদিনের ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের অভিজ্ঞতায়, তা নিঃসন্দেহে আবুবকর সিদ্দিকের জন্য বিরাট অর্জন।

তাই আবুবকর সিদ্দিক রচিত ‘রুদ্রপদাবলী : গণমানুষের গান’ গ্রন্থটি আমাদের গণসংগীতের জীয়নকাঠি। বলে রাখা প্রয়োজন, কবির রচিত অনেক গণসংগীতের সুরারোপ আবুবকর সিদ্দিক নিজেই করেছেন। আজ কবি আমাদের মাঝে নেই, তবে গণমানুষের জন্য তার এই যে একনিষ্ঠতা, তা আজকের অপঘাতের এ সময়ে বড় বেশি প্রেরণাদায়ী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close