নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ মার্চ, ২০২৪

‘বাবা, জন্মদিন কি মৃত্যুদিন হয়ে যাচ্ছে’

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। উপলক্ষ্য ছিল বড় মেয়ের (১২) জন্মদিন। আগুন লাগার পর তারা ছাদে আশ্রয় নেন। কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার বড় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, বাবা, আমার জন্মদিন কি মৃত্যুদিন হয়ে যাচ্ছে?’

কামরুজ্জামানের মতো এডিশনাল ডিআইজি হিসেবে হেডকোয়ার্টার আর অ্যান্ড সিপিতে কর্মরত নাসিরুল ইসলাম শামীম ২০১৮ সালে স্ত্রী আফরিনা মাহমুদ মিতু মারা যাওয়ার পর আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি। দুই মেয়ে লামিসা আর রাইসাকে নিয়ে তার পৃথিবী সাজিয়েছিলেন। লামিসা বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষে আর রাইসা এ বছর ভিকারুননিসা কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও আগুনে পুড়ে মারা গেছে বড় মেয়ে লাইসা। স্ত্রীকে হারানোর পর মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় এ বাবা। লামিসাসহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নাহিয়ান আমিন নামের আরেক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। সেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ইইই বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

অয়ন রায়ের মামী রুবি রায় এবং মামাতো বোন প্রিয়াঙ্কা রায় মালিবাগ থেকে এসেছিলেন বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে। রাতের খাবার শেষে আবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিধিবাম। সেটি আর হয়নি। বৃহস্পতিবারের গ্রিন কোজি কটেজের আগুনের ঘটনায় ধোঁয়ায় তাদের মৃত্যু হয়। পরে সকালে অয়ন মরদেহ শনাক্ত করে। আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে সব স্বপ্ন। মা-মেয়ের রাত কাটাতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। শুধু মা মেয়ে নয়, রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় বসবাস করতেন পপি রায়। দুই সন্তানকে নিয়ে রেস্টুরেন্টটিতে কাচ্চি খেতে গিয়েছিলেন তিনি। এ আগুনে পুড়ে পপিসহ (৩৫) তার মেয়ে আদিতা রায় (১২) এবং ছেলে সান রায় (৮) মারা গেছেন। তাদের মরদেহ নিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে মূর্ছা যাচ্ছিলেন আর আহাজারি করছিলেন নিহত পপি রায়ের মা বাসনা রানি।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন। রয়েছেন এক ইতালিপ্রবাসী ও তার পরিবারের চার সদস্য। রয়েছেন নাজিয়া আহমেদ (৩২) নামে এক নারী ও তার দুই শিশুসন্তান আরহান আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদ (৩)। ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেইলি রোডের সাততলা ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, ইল্লিন, জেস্টি, খান দাবা, ইউকো, হাক্কা-ঢাক্কাসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট, স্যামসাং মোবাইলের শোরুম, কয়েকটি কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। নিচতলায় আগুন লাগার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার আশায় জানালার কাচ ভেঙে লাফ দেয় পাকা রাস্তায়। গুরুতর জখম হয়ে তারা ভর্তি হাসপাতালে।

জানা যায়, বেইলি রোডের আগুন লাগা ভবনটি ছয়তলা। তবে ছাদের একপাশেও একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনের নিচতলায় স্যামসাং ও গেজেট অ্যান্ড গিয়ার নামে দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান এবং শেখলিক নামের একটি জুসবার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও চুমুক নামের একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেসটি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোসিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close