সংসদ প্রতিবেদক

  ০১ জুলাই, ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় বিএনপি

আদালতের বাইরে এক সুতাও ছাড় হবে না : আইনমন্ত্রী

বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্য পাবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছেন। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন তারা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের উপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি জানান।

বিরোধীদলীয় সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি কি পাকিস্তানে থাকে, তাদের নির্বাচনের জন্য হাত ধরে ডেকে আনতে হবে।

তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন হয়েছে। এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি করছেন। কিন্তু এই প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সিইসি ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি দলীয় দুইজন সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারাই ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে এসেছেন। তারা এই সংসদে নিয়মিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমোরিকাসহ বিশ্বের কোথাও বলার সুযোগ নেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচনী ইনস্টিটিউশনগুলো যদি শক্তিশালী না হয়, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যদি জনগণের আস্থা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, সেই দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিগত দশ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা তো এই গ্রহেরই মানুষ, অন্য গ্রহ থেকে তো নিয়ে আসেননি। তাই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিএনপি দলীয় আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি নির্বাচনই না থাকে, মানুষ যদি তার ভোটই প্রয়োগ না করতে পারে, মানুষ যদি তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে না পারে, আগে থেকে যদি ব্যালট বাক্স ভরা থাকে, দিনের ভোট যদি রাতে হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে কি? তিনি বলেন, নির্বাচন যে এখন একটা মল্লযুদ্ধ, তার একটা বড় প্রমাণ এই নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে। ভোট কি একটা যুদ্ধ যে জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে? আর এক কমিশনার বলেছেন, মেশিনে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে গোপন কক্ষে যে ডাকাত ঢুকে থাকে। এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তা নয়, এর মধ্যে আছে পুলিশ ও প্রশাসন। এই ডাকতদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হয়, সে পুরস্কার দেখে বোঝা যায় ভবিষৎতে আরো ডাকাত বাড়বে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে কারা? নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল। স্টেকহোল্ডার হচ্ছি আমরা যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমরা যদি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করি তাহলে ঘরে বসে নির্বাচন কমিশন কোনো দিন কোনো কিছু করতে পারবে না। সব কিছু স্বাধীন। জাতীয় পার্টির ডা. রস্তুম আলী ফরাজী বলেন, ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বই হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন সঠিক হতে হবে, ফেয়ার হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close