সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ২৫ নভেম্বর, ২০২১

সাভারে নদী রক্ষায় গণশুনানি

দখল-দূষণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ

ঢাকার সাভারে অস্তিত্ব সংকটে সাভারের নদী; সুরক্ষা ও সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে স্থানীয়রা নান অভিযোগ করেন। আর বেলার পক্ষ থেকে দখল ও দূষণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জানানো হয়। তারা বলেন, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বংশী, গাজিখালী নদী দ্বারা সাভারবেষ্টিত। শিল্প কলকারখানার বর্জ্যে দূষণ ও প্রভাবশালীদের দখলের কারণে সংকটের মুখে রয়েছে এসব নদী। দূষণযুক্ত পানি পান করে নিম্ন আয়ের পরিবারের নারী ও শিশুরা নানা রোগে ভুগছে। পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ।

গতকাল বুধবার সাভার গলফ ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) আয়োজনে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ বাবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সাভারের নদী-খাল দখল-দূষণের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর অভিযোগ উপস্থাপন ও মুক্ত আলোচনায় উঠে আসে নানা ধরনের সমস্যা ও বিপত্তির চিত্র। এ সময় সাভারের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

গণশুনানিতে বেলার পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে : নদী-নালা, খাল-বিলের সীমানা চিহ্নিত করে দখলমুক্ত ও দূষণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খালগুলো খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ, বন্যাপ্রবাহ এলাকায় আবাসন প্রকল্প নির্মাণ বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে (ট্যানারি, ইপিজেড  আমিনবাজার ডাম্পিং স্টেশন ইত্যাদি) আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান প্রণয়ন ও কার্যকর করা, স্থাপনা নির্মাণে আইন অনুযায়ী নকশা প্রণয়ন ও অনুমোদন, অনুমোদিত নকশা ব্যতীত যেকোনো স্থাপনা বেআইনি চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদ করা।

সুপারিশের মধ্যে আরো রয়েছে সাভারে স্থাপিত ট্যানারির সিইটিপি অবিলম্বে কার্যকর করা এবং সম্পূর্ণরূপে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ট্যানারির কাজ বন্ধ রাখা, সব কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন নিশ্চিত করা, ইটিপি চালু রাখার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক শিল্পকারখানাগুলোর জন্য গ্রিন ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা রাখা, সাভারে অবস্থিত ঢাকা ইপিজেডের সিইটিপি কার্যকর করাসহ ইপিজেডের ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং এর কার্যক্রমে জবাবদিহি আনা, সাভার পৌরসভার বর্জ্য একটি সুপরিকল্পিত বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করে ২০১৭ সালে, সাভারে নদী রক্ষা কমিটি ও নাগরিক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এটি আর এগোয়নি। তারপরও আজ যে আলোচনা হয়েছে এর ওপর ভিত্তি করে আমি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে সাভারের নদীগুলো দখল ও দূষণ মুক্ত করার চেষ্টা করব।

গণশুনানিতে এলাকাবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মো. মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাভার,  আবদুল গনি মেয়র, সাভার পৌরসভা, শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close