আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৫ মে, ২০১৯

হতাশায় কংগ্রেসে পদত্যাগের হিড়িক

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দলের শোচনীয় পরাজয়ের পর হতাশ হয়ে একের পর এক পদত্যাগ করে যাচ্ছেন কংগ্রেস পার্টির নেতারা। এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশের প্রেসিডেন্ট রাজ বাব্বারসহ তিন রাজ্যের দলীয় প্রধানরা কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আজ শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাহুল নিজেও পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি রাজ বাব্বার নিজের কেন্দ্রে তো হেরেছেনই, সার্বিকভাবে ওই রাজ্যে দলেরও শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। ওড়িশা এবং কর্নাটকেও ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। এরপরও লোকসভা নির্বাচনে সেখানে ভরাডুবি হওয়ায় কর্নাটকের কংগ্রেসের প্রচার-প্রবন্ধক এইচ কে পাতিল ইস্তফা দিয়েছেন। ওড়িশায় ২১টি আসনে মাত্র একটি দখল করতে পেরেছে কংগ্রেস। নবীন পট্টনায়েকের বিজেডির দাপটে কংগ্রেস এবং বিজেপি ওড়িশায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সে রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি নীরাঞ্জন পট্টনায়েকও ইস্তফা দিয়েছেন।

নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজএইটটিন জানিয়েছে, নিজের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত হওয়ার পর কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে তার মা কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইউপিএ জোট নেতা সোনিয়া গান্ধী এই প্রস্তাবে সায় দেননি।

গান্ধী পরিবারের দুর্গ বলে পরিচিত আমেথিতে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যান রাহুল।

প্রাচীন দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী নেহরু-গান্ধী পারিবারের সর্বশেষ উত্তরাধিকারী। তার প্রপিতামহ জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের প্রথম আর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। তার দাদি ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, আর তার বাবা রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনের আগে আমেথির প্রতিটি পরিবারকে ‘আমার আমেথি পরিবার’ সম্মোধন করে চিঠি পাঠিয়েও ভোট পাননি রাহুল। ব্যালট বাক্সে ভোট পড়েছে অভিনয় থেকে রাজনীতিতে আসা বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির ঘরে। এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে কেউ কংগ্রেসের বড় জয় আশা করেনি। তবে অনেকেই ভেবেছিলেন ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে ভালো করবে। কংগ্রেস হয়তো পার্লামেন্টে যাবে; তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন গান্ধী যুগের অবসান ঘটলো কি? নাকি এতেই দলটির অদৃষ্ট লেখা হয়ে গেল। কংগ্রেসের ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু জানাতে অস্বীকার করে রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হবে। ওয়ার্কিং কমিটি কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম। জয় পাওয়া এবং না পাওয়া সব কংগ্রেস কর্মীকেই আশা না হারানোর পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমরা কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রাখব আর অবশেষে আমরা জিতব’। কংগ্রেসের শোচনীয় এই ফলাফলের কারণে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের দাবি, দলের সভাপতির পদ থেকে রাহুলের পদত্যাগ। দিল্লিতে গুজব ছড়িয়েছে রাহুল পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতা মনিশঙ্কর আইয়ার বিবিসিকে বলেছেন, কংগ্রেস তার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। রাহুল পদত্যাগ করতে চাইলেও কংগ্রেস তার পদত্যাগ গ্রহণ করবে না। লখনউতে কংগ্রেসের মুখপাত্র ব্রিজেন্দ্র কুমার সিং সেই কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, গান্ধী পরিবারের দায়িত্ব থাকায় সমস্যা নেই। তার মতে, সমস্যা রয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নির্বাচনি প্রচারণায় ভুল সিদ্ধান্তে। বিগত কয়েক বছরে গান্ধী পরিবার বেশ খানিকটা প্রভাব হারিয়েছে। বিশেষ করে শহুরে তরুণ ভোটারদের কাছে। কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, তাদের কাছে নেহেরু-ইন্দিরা আমলে নেওয়া নীতির প্রভাব খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারছে না।

বরং এসব ভোটারদের কাছে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সরকারের আমলে দুর্নীতি আর বিতর্কই স্পষ্ট হয়ে আছে। বৃহস্পতিবারের ফলাফলে দেখা গেছে, কংগ্রেসের ওপর ভোটারদের আস্থা এখনো কম। আর রাহুল তার লক্ষ্য দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তবে পরাজয়ের জন্য কংগ্রেসের কাঠামো কখনোই রাহুল বা তার নামকে দায়ী করেনি। এক কংগ্রেস কর্মীর পরামর্শ, রাহুলের একজন ‘অমিত শাহ’ দরকার। তার ইঙ্গিত বিজেপি সভাপতি যেভাবে কলাকৌশল তৈরি করে মোদিকে প্রথমে গুজরাট আর পরে দিল্লি জয় করে দিয়েছেন সেদিকে। পরাজয়ের জন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে হয়ত রাহুলকে দায়ী করবেন না। অতীতের মতোই তারা তাকে সমর্থন করে যাবেন।

গত কয়েক বছরে রাহুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে উন্নতিই দেখা গেছে। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে দলের প্রচারণায় নতুনত্ব এসেছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নীতির সমালোচনা করেছেন নিয়মিত। ডিসেম্বরেই তার হাত ধরে রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাই ভেবেছিল এবার হয়ত কংগ্রেসের কিছু হবে, লড়াইয়ে ফিরে আসতে পারে দলটি। ভারতের অনেকেই মনে করেন, প্রিয়াঙ্কাই পারবেন সত্যিকার অর্থে কংগ্রেসকে রক্ষা করতে। তবে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতা ভিরেন্দ্র মদন বলেন, আমাদের ইশতেহার ছিল সবচেয়ে ভালো। যে নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা ছিল একবারে সেরা। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম ভোটাররা এটাকে সমর্থন দেবেন, কিন্তু তা ঘটেনি। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের মূল্যায়নের সময় এখন। ভুল কোথায় হয়েছে তা বের করা দরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close