জে এম মমিন, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

ভোলার বোরহানউদ্দিন

কম দামেও ক্রেতা নেই তরমুজের লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা

মৌসুমের শুরুতে দাম অতিরিক্ত থাকলেও এখন দাম কমিয়েও আশানরূপ তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার তরমুজ ব্যবসায়ী। এতে লোকসানের মুখে পড়ছে উপজেলার অনেক চাষী।

উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা চর সামসুদ্দিন, ১০ নম্বর, চর পাতা, দেউলা এবং সাচড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তরমুজ চাষীরা জানায়, আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তরমুজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে দাম ভালো ছিল। এখন পানির দামেও তরমুজ বিক্রির করতে পারছেন না তারা।

চর সামসুদ্দিনের চাষী জাহাঙ্গীর আলম জানান, মৌসুমের শুরুর দিকে যারা তরমুজ বিক্রি করছেন, তারা ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। এখন অনেক কম দামে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, বর্তমানে খেত থেকে ১৫-২০ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ দরে। যা গত বছর পাইকারি দর বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়। ১০-১৫ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতিটি ১০০-১২০ টাকা এবং এর চেয়ে কম ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে।

একই চরের চাষী সোহেল জানান, তিনি ৬০ একর জমিতে সুপার ড্রাগন ও বিট ফ্যামিলি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ফলন অনেক ভালো হলেও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচ ওঠা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

একইভাবে রুবেল, শাকিল, মুসা বিশ্বাস, রিয়াজ মীরসহ অনেক চাষী জানান, ফলন ভালো হলেও গরম কম ও রমজান থাকায় বাজারে তরমুজের চাহিদা অনেক কম। তাই খুবই কম দামে তরমুজ বিক্রি করছেন তারা। কিন্তু তাতেও তরমুজ ক্রেতা মিলছে না। গত বছর যে তরমুজ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়ও কিনছেন না ক্রেতারা।

এদিকে বোরহানউদ্দিন পৌর বাজার, কুঞ্জের হাট, দরুন বাজার ও মজম বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে, বড় আকারের তরমুজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আগের বছর একই আকারের তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া মাঝাড়ি আকার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়।

বাজারে তরমুজ কিনতে আসা একাধিকা ক্রেতা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কারণে ভরা মৌসুমেও তরমুজের দাম অস্বাভাবিক থাকে। তাই এ বছর তরমুজ কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অধিকাংশ ক্রেতা। এ কারণে দাম কমিয়েও ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না।

বোরহানউদ্দিন কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় মোট ৮২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এখান থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন তরমুজের ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় প্রতি বছর থেকে এ বছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

বাজারে তরমুজের দাম কম থাকার কারণ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে রমজান এগিয়ে আসার পাশাপাশি এখন প্রকৃতিতে গরম কম। তাছাড়া মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত দামের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তরমুজ বয়কটের পোস্ট করায় চাহিদা কিছুটা কম। তবে এখন দাম ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে আছে। আমরা আশা করছি, ঈদের পর তরমুজের চাহিদা ও বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। তরমুজ চাষ করে কোনো চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাদের সহযোগীতা করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close