মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর (রাজশাহী)

  ১৭ মার্চ, ২০২৪

দুর্গাপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়

২৬ বছর ধরে স্কুলের দুই পদে প্রমাণেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ

রাজশাহীর দুর্গাপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস-সহকারী থেকে অবৈধ পন্থায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া একই ব্যক্তি ২৬ বছর ওই প্রতিষ্ঠানে দুই পদে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাহেদ আলীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনা তদন্তে প্রমাণ মিললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গত ১২ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং শিক্ষামন্ত্রী ও মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের কাছে অনুলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী এরশাদ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী ২৬ বছর একাই দুই পদে চাকরি করছেন!

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী প্রথমে অফিস সহকারী পদে ১৯৯২ সালের ১ আগস্ট যোগদান করেন। এরপর নিয়ম ভেঙে ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট সহকারী শিক্ষক পদে (কৃষি) যোগদান করেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষক পদে থাকাকালীন তিনি আগের পদে ইস্তফা না দিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ৬ মাস বেতন উত্তোলন করেন। এরপর পুনরায় নিয়ম ভেঙে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

অফিস সহকারী পদে ইস্তফা না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে নিম্নমান অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া এরশাদ আলীর চাকরি এমপিওভুক্ত হয় নাই। দীর্ঘ ৯ বছর চাকরি এমপিওভুক্ত না হওযায় বেতন-ভাতা পাননি এরশাদ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী সোনালী ব্যাংক দুর্গাপুর শাখার ৩৮৮০ হিসাব নম্বরে দুই পদের অনুকূলে জমা করা বেতন ভাতা ২৬ বছর ধরে উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এছাড়া, দুর্নীতি ও অনিয়ম করে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, নিজের মেয়ের বাল্য বিয়েতে বাধ না সাঁধতে ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া নিজের সাজা মওকুফ করতে ভুয়া সচিব পরিচয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোনে হুমকিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলীর অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির জোরে এখনো বহাল তবিয়তে সপদে চাকরি করছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধের এমপিও অর্ডার সিট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এমপিও শিটে প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী বেতন ভাতা হিসেবে ৩৮ হাজার ৮৯০ টাকা এবং অফিস সহকারী পদের বেতন ভাতা ১২ হাজার ৪৯০ টাকা সোনালী ব্যাংক দুর্গাপুর শাখায় তার হিসাব নম্বরে একই মাসে জমা হয়েছে। এভাবে তিনি গত ২৬ বছর ধরে একই কায়দায় বেতন ভাতা উত্তোলন করে চলেছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এরশাদ আলী বলেন, উপরোক্ত বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২০২২ সালের ৬ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহীদুল হক সরেজমিনে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল করলেও কোনো ব্যবস্থা না করে বিষয়টি নিয়ে গড়িমশি শুরু করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা।

পরে ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ ইউএনওর কাছে আবেদন করলে তাতেও কোনো ফল হয়নি।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহীদুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী এরশাদ আলীর অভিযোগ তদন্তে প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলী আগের পদ ইস্তফা না দিয়ে পরে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। যা বিধি লঙ্ঘনের সামিল। সাহেদ আলী একই নাম অক্ষরের ভিন্নতা এনে আজ পর্যন্ত দুটি পদেই চাকরি করছেন। এ বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি।

প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উভয় পদেই বেতন ভাতা পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এটা আমার ভুল হয়েছে। এ বিষয়ে ডিজি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সব জানেন। তবে অফিস সহকারী পদে বেতন ভাতা এলেও তিনি তা কখনো উত্তলোন করেননি বলে দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close