আহমেদ রেজওয়ান, ফেনী

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শর্শদী রেলস্টেশনে জনবল সংকট, কার্যক্রম স্থগিত

* জনগণের ভোগান্তি * দখল হয়ে যাচ্ছে জায়গা * বেড়েছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য * গড়ে উঠেছে রেলের তেল চুরি চক্র

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নে শর্শদী রেলস্টেশনের কার্যক্রম জনবল সংকটের কারণে স্থগিত রয়েছে। ফলে স্টেশন এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের অভয়াশ্রম। মাদক কারবারিরা সহজেই করতে পারছেন মাদকদ্রব্য ক্রয় বা বিক্রয়। স্টেশনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের জায়গা।

পরিচর্যার অভাবে স্টেশনের আশপাশ হয়ে উঠেছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এ স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রেলের তেল চুরির একটি চক্র।

শর্শদী স্টেশন বহু বছরের পুরোনো। সরেজমিনে স্টেশনটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ভবন, যুক্ত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় কারিগরি বিষয়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ফুটওভারব্রিজ। এই আধুনিকায়ন হলেও এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি জনবল। স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফরম ও প্রাঙ্গণে সুনশান নিরবতা। ভবনের ভেতরের কক্ষগুলো নোংরা আবর্জনায় ভরা। এলোমেলো হয়ে আছে চেয়ার টেবিল। স্টেশন মাস্টার ও টিকিট কাউন্টারের কক্ষের আসবাবপত্রে ধুলোবালির আস্তরণ জমেছে। মেঝে ও দেয়াল স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। তালা ঝুলছে সবকটি কক্ষে। ফুটওভারব্রিজের দুই দিকে ওঠানামার জায়গায় আগাছা জন্মেছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন এই স্টেশনে কোনো কর্মকর্তা না আসায় পাশের ডোবা দখল করে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ হচ্ছে। অনেকে স্টেশনের খালি জমিতে মাচা তৈরি করে শাকসবজি চাষ করছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই স্টেশনে ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটের নাসিরাবাদ, সিলেট রুটের জালালাবাদ, লাকসামণ্ডচট্টগ্রাম রুটের ডেমো ট্রেনের যাত্রী ওঠানামা করতেন। কিন্তু স্টেশনে টিকিট কাউন্টার না থাকায় যাত্রীরা টিকিট নিতে পারতেন না। তারা এই স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার সুবিধা পাচ্ছিলেন কিন্তু টিকিট কেটে ট্রেনে উঠার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন।

শর্শদী স্টেশনে তিনজন স্টেশন মাস্টার ও দুজন কর্মচারীর পদ কাগজে-কলমে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ স্টেশনে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। স্টেশন মাস্টার আনোয়ারুল কবির শিকদার কুমিল্লা স্টেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অন্যজনকে বদলি করা হয়েছে ফেনী স্টেশনে। স্টেশন মাস্টারের আরেকটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে একজনকে অন্য স্টেশনে বদলি করা হয়েছে ও আরেকজন অবসরে গেছেন। ফলে দুটি পদ রয়েছে শূন্য। শর্শদী ইউনিয়নের বাসিন্দা সরোয়ার আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এখানে রেল পুলিশের টহল একেবারে নেই বললেই চলে। ফলে স্টেশনকে ঘিরে মাদক কারবারি চক্র গড়ে উঠেছে। মানুষের সমাগম কম থাকায় মাদকসেবীরা সহজেই এখানে মাদক গ্রহণ করতে পারে। তাই স্টেশন এলাকা মাদকসেবীদের আড্ডার জায়গায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর স্টেশনে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, শর্শদী স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এখানে ট্রেনের তেল চুরির একটি চক্র তৈরি হয়েছে। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের যোগসাজশে এ স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে চুরি হচ্ছে তেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close