নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০৩ আগস্ট, ২০২২

উপকারভোগীর তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম

নওগাঁয় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেলের বিরুদ্ধে। উপকারভোগীদের নামের তালিকায় বিভিন্ন জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তথ্য ব্যবহার করে তাদের নামে অবৈধভাবে চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সুধীজনরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গেল পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গরিব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) চাল বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ৪ জুলাই নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ১ হাজার ৬৯৪ জন উপকারভোগীর নামের তালিকা তৈরি করে জমা দেন চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল। যেখানে অনেক মৃত ব্যক্তিদের জীবিত দেখিয়ে তালিকায় নাম দেওয়া হয় এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত কারণে বসবাসকারী ওই ইউনিয়নের লোকেদের নাম দেওয়া হয়। তালিকায় একাধিক চাকরিজীবী, বিত্তবান ও দাদন ব্যবসায়ীর নামও দেখা যায়। এছাড়াও জীবিত যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ভিজিএফ তালিকায় নাম থাকা বিষয়ে অবগত নন। অথচ তাদের অজান্তেই চাল উত্তোলন করিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ঈদের পর বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ক্ষোভে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন সুধীজনরা।

চন্ডিপুর ইউনিয়নের বলিরঘাট গ্রামের বাসিন্দা জহুরা বেগম ও আবদুল মজিদ বলেন, ঈদে ভিজিএফ’র চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণ করা হলেও তালিকায় আমাদের নাম থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি। ঈদের কিছুদিন পর জানলাম ওই তালিকায় আমাদের নাম দিয়ে চালগুলো অন্য কেউ তুলে নিয়েছে।

পাশ্ববর্তী ইলশাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ও চুনিয়াগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এবাদুল হক ও স্বপন বলেন, ভিজিএফ’র তালিকায় আমাদের নাম থাকলেও আমরা কোন চাল পাইনি। তালিকা করা হচ্ছে সেটাও আমরা জানতাম না।

চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুফ আহম্মেদ বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলার শিকার হতে হয়।

ইউপি সদস্য আব্দুস সবুর মন্ডল ও ময়েন উদ্দিন বলেন, সামান্য কিছু কার্ড আমাদের মাধ্যমে উপকারভোগীদের বিতরণ করা হয়েছে। আমরা নিজেরা যেসব কার্ড বিতরণ করেছি, সেখানে কোন অনিয়ম হয়নি। বাকি কার্ডগুলো কি হয়েছে সেটা চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ওয়াহেদুল্লাহ প্রামাণিক বলেন, চাল বিতরণের দিন একই ব্যক্তি একাধিক কার্ড দিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল উত্তোলন করেছেন। তাদের বাঁধা দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও লাভ হয়নি।

চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল বলেন, ইউপি সদস্যদের মাধ্যমেই উপকারভোগীদের মাঝে টোকেন দেওয়া হয়েছিল। চাল বিতরণের দিন যাতে একই ব্যক্তি একাধিকবার চাল নিতে না পারে, সেজন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজে উপস্থিত ছিলাম।

সদর ইউএনও মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ’র তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম থাকাসহ চাল বিতরণে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close