বাগেরহাট প্রতিনিধি

  ২২ জুন, ২০২২

বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

প্রশিক্ষক ও জনবল সংকট

বেকার যুবকদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে দেশ গঠনে অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করছে বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। কিন্তু দক্ষ প্রশিক্ষক ও জনবল সংকটে ভুগতে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। এছাড়া বাগেরহাট জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ চাহিদা অনুযায়ী তারা ভালো প্রশিক্ষণ পায়নি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দক্ষ কারিগরি শিক্ষার অভাবে কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেন না তারা। তাই বেকারত্ব ঘোচাতে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের দাবি তাদের। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বলছে, জনবল সংকটে থাকলেও সাধ্য অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। তবে বাগেরহাটের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাহিদা অনুযায়ী উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দক্ষ প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ এ সমস্যার সামাধান।

বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গত ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, যুব উন্নয়ন থেকে নেওয়া এ প্রশিক্ষণ কর্মক্ষেত্রে তাদের কোনো কাজে আসছে না। যার মূল কারণ হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ না পাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে শুধু সার্টিফিকেটের জন্য ও আর্থিক সুবিধার জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়াকেও দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান বলেন, গত বছর আমি বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি যা শিখেছি, সেটা শুধু কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে। শুধু একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে যুব উন্নয়ন থেকে কাক্সিক্ষত প্রশিক্ষণ পাচ্ছি না আমরা।

সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা তানজিম আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে বর্তমান সময়ে আমাদের মতো যুবকদের কাছে পছন্দের পেশা হয়ে উঠছে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং। ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে আমাদের। এসব করতে হলে যুব উন্নয়নে দক্ষ প্রশিক্ষকের দ্বারা চাহিদা অনুযায়ী আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং ও মোবাইল সাভির্সিংয়ের মতো বিষয়গুলোর ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দক্ষ প্রশিক্ষক ও জনবল সংকট সমাধানের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাগেরহাটের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ ও সবার আন্তরিকতায় সংকট কাটিয়ে উঠে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণকে আধুনিকায়ন করা সম্ভব।

বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীহার রঞ্জন সাহা বলেন, যুব উন্নয়নে দক্ষ প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকলেই এ সমস্যার সামাধান করা সম্ভব।

বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, তরুন যুবকরা এখন ঘরে বসে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যে প্রশিক্ষকরা রয়েছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান মালিক বলেন, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব ও জনবল সংকটে থাকলেও সাধ্য অনুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অফিসসহ আমাদের উপজেলা অফিসগুলোতেও জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল সংকটে রয়েছে জেলার রামপাল উপজেলা। সেখানে ক্রেডিট সুপারভাইজার, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ক্যাশিয়ার, অফিস সহায়ক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ কর্মরত পদের সাতজনের বিপরীতে পাঁচটি পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া শরণখোলা উপজেলায় কর্মরত পদের সাতজনের বিপরীতে তিনটি, মোড়েলগঞ্জে চারটি, মোল্লাহাটে দুটি, মোংলায় দুটি, সদরে দুটি ও ফকিরহাট, চিতলমারী ও কচুয়া উপজেলায় একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জেলা কার্যালয়েও একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উচ্চমান সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই অর্থবছর যেহেতু প্রায় শেষ, সে ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে যুবকদের চাহিদার ভিত্তিতে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close