প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ জুন, ২০২২

বিভিন্ন জেলায় বন্যার অবনতি

ফরিদপুরে পদ্মার পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম পৌর সভার কিছু এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর ২৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, রংপুরের নিমাঞ্চল প্লাবিত ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬ হাজার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, মৌলভীবাজারের কলমগঞ্জের গ্রামের পর গ্রামে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। নেত্রকোনার মানুষ এক দশকে এমন বন্য দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : হঠাৎ বন্যার প্রভাব পড়তে শুধু করেছে ফরিদপুরে। পদ্মার পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে ফরিদপুরের চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে বইছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খা ও কুমার নদের পানি বেড়ে নিম্ন অঞ্চলে ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার মাসুদ সরদার বলেন, ৭-৮ দিন ধরে পদ্মার পানি বাড়ছে। দুইদিন যাবৎ বাড়ছে হু হু করে। এভাবে পানি বাড়লে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি উঠে যাবে। একই ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন (৭০) বলেন, ‘দুদিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা অ্যয়ে যা”েচ তাতে বয়্যে (ভয়ে) আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে (হয়ে) যায়।’

ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, গত দুদিনে প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বদামসহ অন্যন্য ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম খেত তলিয়ে গিয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে বাদামের সাথে সাথে এ ইউনিয়নের পাট ও তিল ক্ষেত তলিয়ে যাবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ফরিদপুরে হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়ালখাঁর পানি বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-তিন দিনে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের ব্যপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার ইউএনও-কে ৭টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৫০ টনের অধিক ত্রাণ মজুদ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে অভ্যান্তরিন নদণ্ড নদীর পানিও বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শনিবার সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার পুঠিযাবাড়ি, চরমালশাপাড়াসহ বাঁধ অভ্যান্তরে বাড়িঘর বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। এছাড়াও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন্ ফসল ডুবে গেছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ২৪ ঘন্টায় ৪৯ সেন্টিমিট্র বৃদ্ধিপেয়ে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কাজিপুর পয়েন্টেও ২৪ ঘন্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে তিল, কাউন,বাদাম, পাট ও স্বব্জিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে । এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রোকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান জেলার কোথাও কোন ঝুকিপুর্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ নেই । তবে নদী তীরবর্তী কিছু কিছু এলাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে । তিনি আরও জানান ইতিমধ্যেই ভাঙ্গন এলাকায় ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে । এছাড়া ভাঙন রোধে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ৯৬ হাজার জিও ব্যাগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারীতে রাখা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, বন্যাদুর্গত বানভাসী মানুষের মাঝে বিতরনের জন্য ইতিমধ্যেই ৯১১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে । এই গুলো বিতরনের জন্য বন্যায় স্ব স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা চাওয়া হয়েছে । এছাড়া চৌহালি উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত ২৭১ পরিবারের মধ্যে ২১ জুন শুকনো খাবার বিতরন করা হবে বলেও তিনি জানান

শেরপুর : শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকে ভাটিতে পানি বাড়ায় উপজেলার হাতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন এবং শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ও সিঙ্গাবরুণা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ঝিনাইগাতী উপজেলা ও নালিতাবাড়ি উপজেলার কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ঝিনাইগাতীর মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি উজানে কমতে থাকে। কিন্তু ভাটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের হাঁসলিগাঁও, জুলগাঁও, রাঙ্গামাটিয়া ও দেবোত্তরপাড়া এবং হাতিবান্ধা ইউনিয়নের হাতিবান্ধা, ঘাগড়া, বেলতৈল, মারুয়াপাড়া, কামারপাড়া ও সরকারপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে ও বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানেরা জানিয়েছেন।

রংপুর ব্যুরো: তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। এতে নিম্নাঞ্চলসহ তিস্তা চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে গ্রামগুলো। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার বাড়িঘর। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট ও শংকরদহ এলাকায় পানিতে প্লাবিত হয়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জমির ফসল। এতে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা-ঘাট, বিদ্যালয়, মসজিদণ্ডমাদ্রাসা, ঈদগাহসহ, দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন ক্রমেই প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ফলে দিশাহারা মানুষ অসহায়ের মতো অপেক্ষা করছেন নিয়তিকে ভর করে। বাড়িঘর সহায় সম্পদ বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে পড়ে আছি আমরা। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বাসা করছি। খাওয়া দাওয়া করছি অনেক কষ্ট করে। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এখনো। এদিকে, তিস্তার পানি প্রায় সাত দিন ধরে বাড়ছে। দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি, বসতবাড়ি।

তীব্র বেগে পানি গড়াচ্ছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরের কৃষি জমি। তাই বড় বন্যার শঙ্কায় রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।

পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন,কয়েকদিনের বর্ষনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে, আমনের বীজতলা, ভুট্টা, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ফসল। যে কারনে ফসল ওঠা নিয়ে শঙ্কায় আছে কৃষকরা।

লক্ষীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে ভোররাত থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈখাওয়া অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায়, তাহলে খৈখাওয়া,পাঙ্গাটারি, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় ১১ থেকে ১২টি গ্রামে ভাঙন দেখা দেবে। আউলিয়া বাজার, বিনবিনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হু হু করে বাডছে তিস্তার পানি। এছাড়া চিলাখালচর ও মটুকপুরচরে পানি ঢুকেছে।

তিস্তা নদী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাফিয়ার রহমান বানে ভাসা পরিণতি থেকে রেহাই পেতে নদী শাসন করার জোর দাবি জানান। দীর্ঘ দিনের চলা এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান চান তারা। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভাঙনকবলিত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এসব এলাকার বাসিন্দারা একটু সমস্যায় পড়ছে। তাদেরকে উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে যদি ভাঙনের খবর পাওয়া যায় সেখানেও জিওব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি ফলে নোহালীর চর, বৈরাতি, ছালাপাক, মর্নেয়ার চর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে বন্যার কবলে পড়েছেন অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। কুলাউড়ার লংলা পাহাড়ের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কর্মধার মহিষমারা গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নজিব আলীর বাড়ির পাশে বাঁধ ভেঙে যায়।

বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হয় ইউনিয়নের বাবনিয়া, মহিষমারা, কর্মধা, বেরী, হাসিমপুর, ভাতাইয়াসহ কয়েকটি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহদি হাসান জানান, ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এ পানি ছড়িয়ে যেতে পারে রবিরবাজার থেকে কুলাউড়া শহর পর্যন্ত। এদিকে ভারতের কৈলাশহর বেয়ে আসা মনু নদীতেও পানি বাড়ছে দ্রুত।

কমর্ধা গ্রামের তামজিদ আলী জানান, ফানাই নদীতে অতিরিক্ত পানি হওয়ার কারণে মহিষমারা প্রধান রাস্তা ভেঙে মানুষের শত শত জমির ফসল এখন পানির নিচে।

কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। পানিতে এলাকায় কৃষিজমির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ আসেনি। তিনি জানান, বাঁধের এ রাস্তাটাই ছিল গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। বর্তমানে কয়েকটি গ্রামের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

নেত্রকোনা : এক দশকের মধ্যে স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দা-দুর্গাপুরসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ। শনিবার সকালে পাহাড়ি ঢলে পানিতে বারহাট্টার অতীতপুর মোহনগঞ্জ সীমানায় ভেঙে গেছে রেলের কালভার্ট। এতে সকাল থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেল যোগাযোগ। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় অতিরিক্ত পানির চাপে ব্রিজটির দুই সাইডে থাকা গাইড ওয়ালসহ মাটি সরে গেছে। এছাড়া দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রায় ৩৯টি ইউনিয়নের অন্তত কয়েক শতাধিক গ্রাম। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু,গরু ছাগল, বস্ত্র, সঞ্চিত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। তারা বলছেন, ১০/১৫বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি তারা।

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদী পানি উপচে পৌর শহরের ছোট বাজার, তেরি বাজার, চড়মোক্তারপাড়া, থানা, উপজেলা পরিষদ পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়াও উপজেলার গাঁওকান্দিয়া, কাকৈরগড়া, ক্ল্লুাগড়া ইউনিয়নের সবগুলো গ্রামেই ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরসহ প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে জেলা শহরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এছাড়াও নেত্রকোনা সদর উপজেলার মগড়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এরই মধ্যে প্লাবিত হচ্ছে নিন্মাঞ্চল।

এদিকে বানভাসিদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, নেত্রকোনা ৬ টি উপজেলার ৩৯ টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। কংসনদীর বাঁধের একটি অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতে কাজ চলছে। প্রায় ৪৭৩ হেক্টর জমির আউশ ধান ও সব্জি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যাদূর্গতদের জন্য ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে গুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য ৬৮ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ২হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close