চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

মহানন্দা শুকিয়ে এখন ধানখেত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন সোনার ফসল। নদীর চরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিনা চাষে সরিষা, চীনা বাদাম, মসুর আবাদ করছেন চাষিরা। এ ছাড়াও এসব চরে উন্নত জাতের গমের আবাদ সম্প্রসারণ করছে কৃষি বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীগুলোয় পানি না থাকায় ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যার ফলে বরেন্দ্র ভূমিসহ উঁচু জমিতে বোরো আবাদে সেচের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নদী খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন তারা। এ নদীতে রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেটি আলোর মুখ দেখছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদী পাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, একসময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। অনেকে আবার নদীর কিছু জায়গা দখল করে আম বাগান, ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন নদী দখলদারদের একটি তালিকাও করেছে।

জানা গেছে, মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বালাদেশে প্রবেশে করে। এ নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্র্রোতা এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ নদী নাব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি।

মহানন্দা নদীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অংশ একেবারেই নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। নাব্য কমে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে মরে যাচ্ছে মহানন্দা নদী। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী ও আশপাশের খাল-বিল। স্বাভাবিক পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কাজ। নদীটি এখন পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। যে নদী একসময় ভেঙেচুরে গ্রাস করেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও গাছপালা সেই নদীতে এখন জেগে বসেছে চর।

স্থানীয় এক কৃষক বলেন, আমাদের জমি মহানন্দা নদীর ভাঙনে তলিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করে ভালো আছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীগুলোয় পানি না থাকায় ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যার ফলে বরেন্দ্র ভূমিসহ উঁচু জমিতে বোরো আবাদে সেচের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় নদীর বুকেই এখন চাষাবাদ হচ্ছে। জেগে ওঠা মহানন্দা নদীর চরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিনা চাষে সরিষা, চীনা বাদাম, মসুর আবাদ করছেন কৃষকরা। এ ছাড়া এসব চরে উন্নত জাতের গমের আবাদ সম্প্রসারণে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close