শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ০৯ জুলাই, ২০২০

টেকনাফ স্থলবন্দরে পড়ে আছে কোটি টাকার কাঠ

দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা, বাড়ছে চার্জ

করোনায় দুইমাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আটকে পড়েছে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ। লকডাউনে চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরে আটকা পড়া কন্টিনারের চার্জ মওকুফ করা হলেও, এই কাঠ থেকে পুরো চার্জ আদায়ে অটল রয়েছে স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে আনা এসব কাঠ ফলে সরবরাহ করতে না পারায় লোকসানে পড়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত দুই মাসের চার্জ মওকুফ করেন। চট্রগ্রাম বন্দর সরকারের নিদের্শনায় ৫ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময়ে বন্দরে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসছে ও আসবে কন্টেইনার ছুটির সময়ে তাদের খালাস করা হলে শতভাগ চার্জ মওকুফের ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ আদায়ে অনড় রয়েছেন। ফলে টেকনাফ স্থল বন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট চেয়ারম্যান বরাবর কাঠের চার্জ মওকুফ চেয়ে ৭ জুন একটি লিখিত আবেদন করেন টেকনাফ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তা এখনো সুরাহা না হওয়ায় চরম চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর। জানতে চাইলে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘করোনা রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণায় গত দুই মাস লকডাউনে থাকতে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানির কোন কাঠ সরবাহ করতে পারেনি। তার মাঝে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কাঠ থেকে গেল দুই মাসের অতিরিক্ত চার্জ আদায়ে অটল রয়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীদের লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

এই ব্যবসায়ি নেতা বলেন, যদি বৃহত্তম চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানকার ব্যবসয়ীদের স্বার্থে চার্জ মওকুফ করতে পারেন, তাহলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কেন পারবেন না? আমরা চার্জ মওকুফ চেয়ে আবেদনও করেছি, তা এখন পর্যন্ত কোন সুরাহ হয়নি। এইভাবে চলতে থাকলে কাঠ ব্যবসা অচল হয়ে পড়বে। ফলে সরকার হারাবে কোটি টাকার রাজস্ব।

টেকনাফ স্থলবন্দর কাঠ ব্যবসায়ীরা বলেন, লকডাউনের কারণে কোটি কোটি টাকার কাঠ বন্দরে পড়ে আছে। এসব কাঠ বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ নষ্ট হওয়ার পথে। তার উপরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব কাঠ থেকে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করছে। আমাদের মতো এখন অনেক কাঠ ব্যবসায়ী কাঠ নিয়ে দুঃচিন্তার মধ্যে রয়েছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দর সুত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৫০ হাজার পিস বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ গত দুই মাস ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরে পড়ে আছে। এসব কাঠ দেখভাল করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কাঠগুলো লকডাউনে পড়ে সরবরাহ দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ স্থল বন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, কাঠ থেকে অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা আগের নিয়মে চার্জ নিচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারের নির্দশনার কোন চিঠি এবং চট্রগ্রাম বন্দরের চার্জ মওকুফের বিষয়ে অবগত নই। তবে তিনি বলেন, তবে টেকনাফ সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে কাঠের চার্জ মওকুফের আবেদন পেয়েছি। সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।

এই বন্দর কর্মকর্তা আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার কাঠ রপ্তানি না করলেও সেখান থেকে কোটি টাকার কাঠ টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছে। তার বিপরীতে সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close