আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ

  ১৯ জুন, ২০১৯

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রোগীর থালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেন নেতার ভাগনে

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদার বলেছেন, লিজ নেওয়ার পর একদিনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাননি তিনি। তার বদলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতার ভাগ্নে খাবার সরবরাহ করেন। তবে জেলার সিভিল সার্জন বলছেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না।

জেলার দৌলতপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের খাবার দেওয়ার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আফিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্বত্ব¡াধিকারী মো. পিন্টু মিয়া।

মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, টেন্ডার অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা খাবার দেওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সকালে দুটি পাউরুটি, দুটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা, ২০ গ্রাম চিনি পাবে। এছাড়া দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল ও পরিমাণ মতো সবজি দেওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। নিয়ম না মেনে প্রতিদিন সকালে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের দুটি পাউরুটি, একটি ডিম, চা-চামচের পরিমাণের এক চামচ চিনি। দুপুরে ৭ দশমিক ৫০ গ্রাম পরিমাণের সিলভার কার্প মাছ, মোটা চালের ১০০ গ্রাম ভাত এবং ভাজি ও ডাল মেশানো তরকারি। এভাবে নিম্নমানের খাবার দেওয়া ও পরিমাণে কম দেওয়ার ফলে রোগীদের থালায় নির্ধরিত খাবার জুটছে না। সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির রান্নাঘর অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর। খাবার রাখার বিভিন্ন আসবাবপত্রও নোংরা। যে থালায় খাবার দেওয়া হয় তাও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খাবার দেওয়ার কথা। কিন্তু খাবারের সব দায়িত্ব পালন করে আসছেন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের ভাগ্নে জুলহাস মিয়া।

চিকিৎসা নিতে আসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাবিয়া বেগম বলেন, চিকিৎসার চেয়েও খাবারের মান খুব খারাপ এখানে। দুই দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে আছি। যে খাবার দেয় তা খাওয়ার উপযোগী না। প্রতিদিন বাড়ি ও বাইরে থেকে খাবার এনে খাচ্ছি।

চকমিরপুর এলাকার সোনা মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে আমি ভর্তি আছি। প্রথম দিন সকালে দুটি পাউরুটির সঙ্গে চিনি দিয়েছিল, কিন্তু রুটি বাসি থাকায় খেতে পারিনি। দুপুরে ও রাতে অল্পভাতের সঙ্গে ছোট এক টুকরা মাছ এবং ভাজি ও ডাল মেশানো তরকারি। মাছ ঠিকমতো পরিষ্কার ও রান্না না হওয়ায় ফেলে দিয়েছি। ভাজি দিয়ে অল্পভাত খাওয়ার পর রাতে কিনে খেতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কাজে কলমে আফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী পিন্টু মিয়া, কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব কাজ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের ভাগ্নে জুলহাস মিয়া। দলীয় নেতার লোক বলে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে গেলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝামেলা করে। এখন চোখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

জানতে চাইলে আফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. পিন্টু মিয়া বলেন, আমি টেন্ডারের মাধ্যমে পেয়েছি একথা সত্য, কিন্তু এ পর্যন্ত একদিনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাইনি। কাজ পাওয়ার কয়েক দিন পর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস আমাকে মৌখিকভাবে বলে খাবার দেওয়া শুরু করেন। তবে এখন কি অবস্থা জানি না।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস বলেন, খাবার দেওয়ার বিষয়ে আমি জড়িত না। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার দেওয়ার কথা আমার ভাগ্নে জুলহাস মিয়ার কথা শুনেছি। এ প্রসঙ্গে আবদুল কুদ্দুসের ভাগ্নে জুলহাস মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নানা উপায়ে চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। এমন কী তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার কাছেই জানতে পারলাম, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যাতে করে রোগীরা নির্ধারিত মানসম্মত খাবার পান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close