লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল

২৪৭ পদের ১৩২টি শূন্য

মেডিকেল অফিসার, সহকারী মেডিকেল অফিসার ও পাঁচজন সহকারী সার্জনের পদ বহুদিন ধরে শূন্য। যিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তাকেই দেখতে হয় রোগী। আবার সপ্তাহে একদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলার পার্ববতীপুরেও বসতে হয় তাকে। এ অবস্থা লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালের। এক সময় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতেন। হাসপাতালটি এখন পরিণত হয়েছে ভুতুরে এলাকায়। বর্তমানে এর ভবনগুলো মাদক সেবীদের দখলে। ১৯৩৯ প্রতিষ্ঠিত রেলওয়ে হাসপাতালটি সৈয়দপুর রেল কারখানার অধীনে ছিল। ১৯৭৯ সালের ১৫ জানুয়ারি লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের অধীনে হাসপাতালটি দেওয়া হয়। ৩২ শয্যার হাসপাতালটিতে ৯টি নারী ও ১৮টি পুরুষ শয্যার পাশাপাশি সেখানে ৫টি কেবিনও রয়েছে। হাসপাতালের মঞ্জুরিকৃত ২৪৭টি জনবলের বিপরীতে বর্তমানে ১৩২টি পদ শূন্য, যার অধিকাংশই গুরুত্বপূর্ণ পদবি। ৯০ দশকের পরও এই হাসপাতালটিতে প্রচুর রোগী আসতেন, এখন হাসপাতালের লোকজন ও রোগী না আসায় এলাকাটি মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাত দিনের মধ্যে হাসপাতালের আউটডোর খোলা থাকে মাত্র চার দিন। এতে সর্বসাকুল্যে ১৫ থেকে ২০ রোগী চিকিৎসা নেন। এদের সেই সব রোগী রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের লোকজন। এখন আর বাইরের থেকে কোন লোক সেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন না।

এদিকে হাসপাতালের ইনডোরের অবস্থা আরো শোচনীয়। ৩২ শয্যার হাসপাতালে কোনো রোগীই থাকেন না। মাঝে মধ্যে দুই-একজন রোগী ভর্তি হন একেবারে নিরূপায় অথবা দারিদ্র্যের কারণে। ইনডোর সেবার কাজে নিয়োজিত সিস্টার ইনচার্জ মহসিনা বেগম বলেন, এই রেলওয়ে হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ ও সেবার মান ভালো থাকায় একসময় এখানে প্রচুর রোগী আসতেন। এখন চিকিৎসক নেই, নেই ওষুধ সরবরাহ। তাই এখন আর রোগীও আসেন না এখানে।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী সারাফত হোসেন জানান, চিকিৎসকের ৭টি পদের মধ্যে ডিএমও ছাড়া সবকটি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। হাসপাতালের নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক থাকলেও কোনো কাজে আসছে না।

লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালের ডিভিশনাল রেলওয়ে মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. মো. আনিছুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে পুলিশ যেমন পুলিশ বিভাগের অধীনে থেকে সেবা দিচ্ছে। তেমনি হাসপাতালটি রেলওয়ের অধীনে রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিলে কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাসপাতালটির এই দুরাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতি মাসেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই সম্ভবত হাসপাতালে দুই-তিনজন চিকিৎসক আমরা পাব। তারা যোগ দিলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হবে, তবে খুব তারাতারি এসব সমস্যা থেকে হাসপাতালটি বের হয়ে আসবে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close