ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

শীতে কাবু চা শ্রমিকরা

সারি সারি চা বাগান কুয়াশার চাদরে ঢাকা। বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। প্রকৃতির এমন আচরণ স্বভাবসুলভ হলেও শীত বস্ত্রের অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন চা বাগানগুলোতে বসবাসরত শ্রমিকরা। সকাল-সন্ধা খড়কুট জ্বালিয়ে অনেকে আগুনের তাপ নিচ্ছেন। রাতে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। আর এর সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। শীতের কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও শ্রমিকদের প্রাণ চাঞ্চল্যে দেখা দিয়েছে ভাটা। অবস্থা মৌলভীবাজারের অধিকাংশ চা শ্রমিকের। প্রয়োজনীয় শীত বস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মৌলভীবাজারকে চায়ের রাজধানী গড়ে তোলার নেপথ্য কারিগররা।

সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু বরাদ্দা দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বেসরকারি ভাবে চা বাগানগুলোতে পৌঁছেনি কোন শীত বস্ত্র। তাছাড়া বাজার থেকে শীতের গরম কাপড় কিনার মতো সামর্থ নেই সাধারণ শ্রমিকদের। ফলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বৃত্তশালীদের আহ্বান করছেন সুশিল সমাজের নাগরিকরা।

চা শ্রমিকরা জানান, প্রচ- শীতে তারা কাবু হয়ে আছেন। এই শীতে জীবণযাপন করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। জুরির সোনারুপ চা বাগানের চা শ্রমিক গনসেশ বলেন, পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করছেন। তিনি ২০১৭ সালে একটি কম্বল পাওয়ার পর এখনও কোনো জামাকাপড় পাননি। এরকম আরোও অনেক চা শ্রমিক গরম কাপড়ের জন্য কাঁদছে। ফুলচারার চা বাগান গ্রামের ৬৩ বছর বয়সী কৃষক বলোরাম জানান, ঠান্ডা তরঙ্গে এই বছর অনেক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ডা. পলাশ কুমার রায় বলেন, বেশিরভাগ রোগী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা ঠান্ডা সংক্রামিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কারমকার জানান, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানগুলিতে চার লাখ চা শ্রমিক বাস করে। শীতে বেশির ভাগই সবচেয়ে খারাপ অবস্থার শিকার। শীত তাদের কাবু করে রেখেছে। জানতে চাইলে পাহচিম জুড়ি ইউপি সদস্য সাজ্জাল কান্তি বাওরি জানান, গত বছর বিতরণের জন্য ২০ টি কম্বল পেয়েছিলাম কিন্তু এই বছর মাত্র ১০ টি পেয়েছি। শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রণয়ী গোলা জানান, গরীব মানুষদের শীতবস্ত্র কিনার ক্ষমতা নেই। ঠান্ডার কারণে তারা কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছে না।

এদিকে জেলার আবহাওয়া পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, জানুয়ারির শুরুতে জেলার শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি থেকে এক লাফে ৮ ডিগ্রিতে নেমে আসে, যা এ এলাকার মানুষকে শীতের অনুভুতি বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার মো. আনিস আহমেদ জানান, বুধবার সকালে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রের্কড হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে শীত বেশি অনুভূত হয়।

মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) বনমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন নিজ এলাকায় ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি ড. আব্দুস শহীদ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় চা শ্রমিক ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।

মৌলভীবাজারে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ জানায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৩৭ হাজারটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পাঁচ পৌরসভায় চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আরোও ৫০ হাজার কম্বল চাওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আশরাফুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

সুশিল সমাজের নাগরিকরা জানান, সমাজে চা শ্রমিকরা এখনও অনেক পিছিয়ে ও অবেহেলিত। তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের ধনী লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে প্রচন্ড শীতে তারা অসহায় হয়ে আছেন। ওদের পাশে দাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনসহ ব্যক্তিবর্গকে আহ্বান জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close