মাসুম হোসেন, শাজাহানপুর (বগুড়া)

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

শাজাহানপুরে কৃষিজমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

বগুড়ার শাজাহানপুরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০টি ইটভাটা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়ের পাশে অবস্থিত এসব ভাটা। ফসলি জমির ওপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে যেমন পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসছে তেমনি ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় গাছপালা ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রভাবশালীরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা উপজেলার পুলিশ-প্রশাসন ম্যানেজ করেছেন। কৃষিজমি থেকে মাটি কাটতে তাদের আর সমস্যা নেই। এখন সাংবাদিকরা ম্যানেজ হলেই তাদের আর কোন ঝামেলাই থাকবে না।

জানা গেছে, উপজেলার খোট্টাপাড়া, মাদলা ও আড়িয়া ইউনিয়নে এবং শাজাহানপুর উপজেলাধীন বগুড়া শহরের বর্ধিত ১৩নং ওয়ার্ডের সুজাবাদ এলাকায় ইটভাটার সংখ্যা বেশী। ইটভাটার মালিকেরা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে এককালীন অল্প কিছু টাকা দিয়ে চাষাবাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জমির উপরি অংশের উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য। তবে ইটভাটার মালিকরা সরাসরি মাটি উত্তোলনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন না। তারা কৃষকদের কাছ থেকে মাটি কিনতে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে উপজেলায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী তৈরী করেছেন। তাদের মাধ্যমে ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও ইটভাটাগুলোতে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। প্রাকৃতিক কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে বনজ সম্পদ তেমনি নষ্ট হচ্ছে ওইসব বনে বসবাসকারী জীবজন্তুর ভারসাম্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বেশীরভাগ ইটভাটায় কম উচ্চাতার চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বেশীরভাগেরই অবৈধভাবে ড্রাম চিননি বসানো। এসব ইটভাটাগুলো ঘনবসতি এলাকা ও ধানী জমিতে অবস্থিত। এ কারণে মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আশপাশের ফসল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলায় প্রায় সব ইটভাটাতেই পোড়ানো হচ্ছে বনজ ও ফলদ গাছ। ইট তৈরীর জন্য উপজেলার কামারপাড়া, বারআঞ্জুল, চকজোড়া, খরনা ধাওয়াপাড়া, দাড়িগাছা পলিপাড়া গ্রাম, নিশ্চিন্তপুরের নন্দগ্রামে এ্যাসকেভটর মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার সাজাপুর এলাকার পদ্মপুকুরে স্থানীয় সড়কের পাশ থেকে গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় সড়ক।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস সবার নেই। প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে ভোগান্তির কবল থেকে তারা রক্ষা পাবে। ইটভাটার ট্রাকের কারণে তাদের চলাচলের রাস্তার বেহালদশা হয়েছে। ধূলা-বালির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন।

শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন জানান, ‘এখন নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত রয়েছি। কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close