তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর

এখানো পূর্ণঙ্গ রূপ পায়নি দেশের অন্যতম স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। অথচ বন্দরটি ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের নিকটস্থ থাকায় বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। চতুর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য আর পর্যটনের অপার সম্ভাবনাম থাকলেও দেখভালের অভাবে বন্দরের কার্যক্রমে তেমন গতি আসছে না।

১৯৯৭ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন এই চার দেশের সঙ্গে চতুর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে প্রথম শ্রেণির এই স্থলবন্দরটি চালু করা হয়। পরে সরকারিভাবে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ ও বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনো বন্দরের ভিতরে এখনো চালু হয়নি স্ক্যান মেশিন। এলসি চালানের টাকা জমাদানের জন্য সরকারি ব্যাংক, পর্যাপ্ত মালামাল লোড-আনলোডের জায়গা, প্রয়োজনীয় জনবল সংকট তো আছেই। ইমিগ্রেশন চালুর পর দেশি-বিদেশি যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাজধানী ঢাকা থেকে কোনো ডে কোচ বা ট্রেন না থাকায় দিন দিন দুর্ভোগ বাড়ছেই। এমনকি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে যাতায়াত করাটা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, স্থলবন্দরটি এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত। স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে পাথরবাহী ট্রাকের লোড-আনলোডের জায়গার অভাবে রাস্তার উভয় পাশে সারিবদ্ধভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারেন না। দীর্ঘ সময় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

অন্যদিকে বাংলাবান্ধা বাস টার্মিনাল থেকে বেশ দূরে ইমিগ্রেশন অফিস হওয়ায় সেখানে আসা-যাওয়ায়ও সমস্যা হয়। পর্যাপ্ত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক না থাকায় যাত্রীসাধারণকে হেঁটে যেতে হয় ইমিগ্রেশন অফিসে। স্থলবন্দরের আশপাশে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। এ ছাড়া সরকারিভাবে এলসি ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার না থাকায় অনেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এসে বিপাকে পড়েন। আবার কেউ কেউ দেশি মুদ্রা নিয়ে ভারতের ফুলবাড়িতে মানি একচেঞ্জ করলেও বাংলাদেশ মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। বাংলাবান্দায় নেই কোনো আবাসিক হোটেল বা খাবারের রেস্তোরাঁ। এ নিয়েও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পঞ্চগড়ের জগদল, ভজনপুর ও বুড়াবুড়ি এলাকায় পাথরকোয়ারি হওয়ায় কলগুলো স্থলবন্দর কেন্দ্রিক। এ ছাড়া ২০১১ সাল থেকে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত পাথর আমদানি শুরু হয়। ফলে আমদানিকারকরা স্থলবন্দরের আশপাশে শতাধিক কল স্থাপন করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতর জানায়, পাথর ভাঙার অঞ্চল বা জোন নির্ধারণ করা এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রণীত নীতিমালা প্রয়োগকারী সংস্থা হচ্ছে জেলা প্রশাসন। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। এরপর তারা দেখবে কলগুলো নীতিমালার অন্যান্য দিক মেনে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না।

বিষয়টি নিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন জানায়, যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যা ইমিগ্রেশন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করবে।

এদিকে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ বন্দরে রাজস্ব আয় বেড়েছে অনেক। বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ সালের অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ কোটি টাকা। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতেই আদায় হয় ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর আগে ২০১১-১২ সালে ৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা থাকলেও সর্বোচ্চ ১৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক আদায় করা সম্ভব হয়েছিল।

আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে উন্নত। তবে মোবাইল নেটওয়ার্কসহ অবকাঠামো ও জেলা সদরগুলো থেকে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ রয়েই গেছে।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন বলেন, ‘বাংলাবান্দা স্থলবন্দরের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চারটি দেশ এই স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত। আমরা যদি বন্দরকে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে পঞ্চগড় হবে দেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটক এলাকা। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। এতে এ এলাকার সাধারণ মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close