কোরবান আলী, ঝিনাইদহ

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

হরিণাকুন্ডুতে সিএস গায়েব নিম্ন দরদাতাকে হাট ইজারা

সরকারের গচ্চা ৩১ লাখ টাকা * অভিযোগের তীর ইউএনওর দিকে

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর হাট ইজারায় বড় রকমের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গায়েব করে ফেলা হয়েছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস)। অভিযোগ আছে, চলতি বছরে সর্বনি¤œ দরে ওহিদ মেম্বরকে পুনরায় ইজারা দেওয়ার জন্যই গত বছরের সিএস গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এতে সরকার প্রায় ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি মুখে পড়বে। তবে উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলছেন, এ বছর হাট ইজারার সময় গত বছরের তুলনামুলক মূল্য বিবরণী খুঁজে না পাওয়ায় কম মূল্যে আবারো হাট ইজারা প্রদান করেছেন তিনি। তবে পূর্ববর্তী ইউএনও বলছেন, হাটের সিএস অফিসেই ছিল। এদিকে আইনের অজুহাতে ইউএনও গত বছরের ইজারা ফাইল চেয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাট ইজারা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে সেই দরপত্রগুলো কোথায় গেল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত বছর উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বর এক বছরের জন্য ভবানীপুর সাধারণ হাট ১৮ লাখ টাকা ও পান হাট ১৭ লাখ টাকা দর দিয়ে ছিলেন। যা ভ্যাটসহ দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ বছর সাধারণ হাট ৫ লাখ ২০ হাজার ও পান হাট মাত্র ৩৫ হাজার ৮৫০ টাকায় তাকে পুনরায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে হাট ইজারায় ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ প্রতিকার চেয়ে গত বছরের দ্বিতীয় দরদাতা আজব আলীসহ আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা গত ২৭ জানুয়ারি হরিণাকু-ু ইউএনও সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও দফতর থেকে সেটি সিল মোহরযুক্ত সাক্ষরে রিসিভও করা হলেও গত এক মাসে তিনি কোন তদন্ত করেননি বলে অভিযোগ জানিয়েছে দরদাতারা।

ইজারাদার আজব আলী, আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা অভিযোগ করেন, গত বছর তারা হরিণাকুন্ডুর ভবানীপুর সাধারণ হাট ও পানের হাট ইজারায় অংশ গ্রহণ করেন। তারা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতা হওয়ায় ইজারা পাননি। উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বর এক বছরের জন্য হাট দুইটির ইজারা লাভ করেন। এসময় ওহিদ মেম্বর সাধারণ হাট ১৮ লাখ টাকা ও পান হাট ১৭ লাখ টাকা দর দিয়ে ছিলেন। তবে একই সময় ওহিদ মেম্বর সর্বনিম্ন দরেও আরেকটি দরপত্র দাখিল করেন। এরপরও তুলনামুলক মূল্য বিবরণ কমিটি উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বরকেই ভবানীপুরের দুই হাট ইজারা দেন। এসময় হরিণাকু-ুর ইউএনও ছিলেন মনিরা পারভিন। উপজেলার বর্তমান ইউএনও সাইফুল জানিয়েছেন, ৩০ বছরের সিএস যাচাই করে দেখা গেছে ভবানীপুর হাটের বার্ষিক ইজারা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে এ বছরও কম টাকায় হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার কাছে হাট নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।

তার এই তথ্যকে মিথ্যে দাবি করছেন গত বছরের দরদাতারা। গত বছরের দ্বিতীয় দরদাতা আজব আলী জানান, গত বছর তিনি সাধারণ হাট ১৬ লাখ টাকা ও পান হাট ১৫ লাখ টাকা দর দেন। নিয়মানুসারে ওই সময় মোট ইজারার শতকরা ৩০ শতাংশ হিসাবে জনতা ব্যাংকের ভবানীপুর শাখায় ৩ লাখ ৬১ হাজার সিডি জমা দেন। যার সিডি নং ১৬২৩১৫ ও১৬২৩১৬। তিনি অভিযোগ করেন, ইউএনও মনিরা পারভিন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম না করলে তাদের দাখিল করা টেন্ডারের কাগজপত্র কোথায় গেল? ১৪২৪ সালের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস) অফিসে সংরক্ষণ থাকলে ১৪২৫ সালে ভবানীপুরের হাট এতো কম টাকায় ইজারা হতো না বলেও তিনি জানান।

গত বছর হাট ইজারায় অংশগ্রহনকারী ভবানীপুর গ্রামের বশির উদ্দীন অভিযোগ করেন, ১৪২৪ সালে তিনি শুধু পান হাটের দর দিয়েছিলেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে তিনি ৭০ হাজার টাকার সিডি করেন। তিনিও এই দুর্নীতির বিচার চান।

বিষয়টি নিয়ে হরিণাকু-ুর সাবেক ইউএনও (বর্তমান কলারোয়া ইউএনও) মনিরা পারভিন জানান, ভবানীপুরের হাট নিয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি। হাটের সিএস অফিসেই ছিল বলে তিনি জানান। হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান মজিদ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা হাট ইজারা কমিটির সভাপতি। তারপরও গত বছর আইনের অজুহাতে আমার কাছ থেকে ফাইল নিয়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ভবানীপুরের হাট নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা সঠিক। এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোদেজা খাতুন জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এটি তার এখতিয়ার বহির্ভুত।তবে গত বছরের হাট ইজারাদার ওহিদ মেম্বর কোন ধরণের আর্থিক লেনদেন অস্বীকার করে বলেন, আমি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে হাট পেয়েছি। কারো টাকা দিইনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist