আব্দুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ০১ মার্চ, ২০১৮

নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল

‘১১টা বাইজ্জা গেল অহনও আহে না, কহন আইব কেডা জানে’

হাসপাতালের বহির্বিভাগে অপেক্ষামান শত শত রোগী, ডাক্তারের দেখা নেই কোথাও। আর বহির্বিভাগের ঢুকতে বিপরীত পাশের মসজিদের সামনে সারি সারি মটর সাইকেল, মনে হবে হাট। অথচ এগুলো সব মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের। ডাক্তারের জন্যে রোগীদের মত অপেক্ষমান তাঁরাও। কি ঔষধ লেখেন ডাক্তার সাহেব। এ অবস্থা নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের। গতকাল বুধবার সরজমিনে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত হাসপাতালে ঘুরে চোখে পড়ে নানা অনিয়ম, দালালদের দৌড়ত্ব আর রোগীদের অসহায়ত্ব।

ঘড়ির কাটা সকাল ৮টা। বর্হিবিভাগের রোগীরা টিকিটের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ে আছেন পৃথক লাইনে। একটু আগে ডাক্তার দেখানোর আশায় অনেকেই ভোরে রওয়ানা হয়ে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সময় বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অসুস্থ্য রোগীদের বসিয়ে রেখে স্বজনরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিট সংগ্রহ করার জন্য। দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয় কিন্তু এখানেই ভোগান্তির শেষ নয়। তার পর শুরু হয় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষার পালা। সাড়ে ৮টায় ডাক্তার আসার কথা থাকলেও বেলা ১১টায়ও ডাক্তারদের দেখা মেলে না।

হাসপাতালের ২য় তলার মেডিসিন বিভাগের সামনে পুরুষ এবং মহিলা রোগীদের দীর্ঘ সারি। এখনো আসেননি ডাক্তার। ঘড়িতে তখন সময় ১০টা ৩৫। সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে, আবার ডাক্তারের কক্ষের সামনে সিরিয়াল দিতে দিতে ক্লান্ত হন কেউ কেউ। মহিলা সারির অনেকেই বসে পরেন লাইন ধরে ডাক্তারের কক্ষের সামনে।

ডাক্তারের জন্যে অপেক্ষমান ৫২ বছরের বৃদ্ধা রমিজা খাতুন। বয়স্ক জনিত সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়াও কোমরে ও মেরুদন্ডে ব্যথার সমস্যা। ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে ক্ষুদ্ধ হয়ে জবাব দেন ‘১১টা বাইজ্জা গেল অহনও আহে না। কহন আইব কেডা জানে।’ তার কথার সঙ্গে সঙ্গে আশে পাশের আরো রোগীরাও গলা মিলিয়ে বলে, ‘ডাক্তার সব সময়েই দেরি করে। দুই-তিন ঘন্টার আগে ডাক্তারের দেহা পামু না। এইডা আমরা আগেই জানি। কি করমু, আমরা গরীব মানুষ। সরকারি হাসপাতালই আমাগো ভরসা। প্রাইভেটে তো ডাক্তারের ভিজিটেই যাইবো হাজার খানেক টেকা। তারপর অসুধের খরচ পামু কই।’

একই ভোগান্তি গাইনী বর্হিবিভাগের রোগীদের, বর্হিবিভাগের তিনজন ডাক্তার। ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম, রোকসানা আক্তার এবং পুনম গোস্বামী। তাদের মধ্যে ২ জন ডাক্তার আসেন ১০ টার পরে । কিন্তু ডাঃ রোকশানা আক্তারের দেখা মেলেনি ১০টা ৫০ মিনিটের পরেও। এদিকে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। তীর্থের কাকের মত ডাক্তারের অপেক্ষায় রোগীরা পরামর্শ কক্ষের সামনে।

এদিকে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের উৎপাতে রোগীরা সময়মত এবং ভালোভাবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেতে পারেন না। আবার দালালরাও আছেন সমান তালে। এই দালালদের উৎপাতে রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌছায়। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের দেয়ালে নানা ধরনের পরিচ্ছন্নতা এবং শৃঙ্খলার বানী যুক্ত সাইনবোর্ড, ব্যানার টানালেও সব কিছু যেন শুভঙ্করের ফাঁকি। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে চলে নিরাপত্তা মনিটরিং। এবং কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা এতটাই কঠোর যে নবজাতক শিশুর মায়েদের জন্যে নির্মিত ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষের ভেতরেও তারা সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে! নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোতালেবের সাথে এ বিষয়য়ে কথা হলে তিনি জানান, নতুনভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, এ বিলম্ব থাকবে না। ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে রোগীরা উন্নত সেবা পায়’।

ব্রেস্ট ফিডিং রুমের ক্যামেরার ব্যাপারে অবগত থাকা সত্তে¡ও কোনরূপ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ক্যামেরাটা শিশু বিভাগ পরিদর্শনের জন্যে। তাতে ব্রেস্ট ফিডিং রুমের কিছু দেখা যায় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist