মহানগর (খুলনা) প্রতিনিধি

  ২১ মে, ২০২২

খুলনায় মিট দ্য প্রেসে দাবি

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে

খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ূন কবীর বালু মিলনায়তনে লিডার্সের আয়োজনে মিট দ্য প্রেস গতকাল শুক্রবার সকালে হয়েছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি করেছেন সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের নেতারা।

মিট দ্য প্রেসে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষার সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু, কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ, খুলনা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি এম. নাজমুল আজম ডেভিড, বাপা ও ওয়াটার কিপার বাংলাদেশের শেখ নুর আলম, ফেইথ ইন অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন প্রমুখ।

মিট দ্য প্রেসে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবতার জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতায় বাংলাদেশর অবদান সর্বনিম্ন (মাত্র ০.৩%), দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মেরু অঞ্চলের বরফগলন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইপিসিরি তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে দুর্যোগ বেড়েছে ১০ গুণ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত করে। দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক দুর্যোগগুলোর ৭০%+ বয়ে যায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে। কিন্তু এ অঞ্চলের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। প্রায় ৫৭০০ কিমি. বাঁধ খুবই নাজুক। এখনো অনেক স্থান রয়েছে যা সামান্য জোয়ারেই ভেঙে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়ি মাটি, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি, যা দুর্যোগসহনশীল নয়। জনসংখ্যার অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্র খুবই সামান্য। প্রতিটি দুর্যোগে ভেসে যায় মানুষের তিলেতিলে গড়া সঞ্চয়ও সম্পদ। ক্রমবর্ধমান দুর্যোগের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি, জীবিকার উৎস হ্রাস, অপুষ্টি, সুপেয়পানির অভাবে রোগব্যাধি বৃদ্ধিসহ প্রতি বছর প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুুখীন হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৩৫ বছরে লবণাক্ততা আগের তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলের ৭৩ শতাংশ মানুষ সুপেয়পানি থেকে বঞ্চিত। লবণাক্ততার কারণে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। এছাড়া লবাণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে এ এলাকায় বসবাসকারীদের গর্ভবতী মায়েদের প্রি-একলাম্পশিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও জরায়ু সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আরো বলা হয়, এত কিছুর পরও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ জোগান দিয়ে থাকে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের আর্থিক অবদান বছরে ৫,৮৭০ কোটি টাকা। মৎস্য সম্পদের মধ্যে এ অঞ্চলে রয়েছে চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া। চিংড়ি ও কাঁকড়া, কুঁচিয়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ বাজেটে তাদের ন্যায্য হিস্যা পায়নি। গতবছর ও এবছর ৩টি মেগা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হলেও তার কাজ এখনো শুরু হয়নি। মানুষ এখনো অরক্ষিত এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা গত ১৮ তারিখে সাতক্ষীরা ২টি সভা, গত ১৯ তারিখে শ্যামনগর ও কয়রা দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।

উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে সুরক্ষিত করার জন্য সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলাকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বা দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ২০২২-২৩ অর্থবছরেবাজেটেবিশেষবরাদ্দ দেওয়া, জলবায়ুপরিবর্তন ও দুর্যোগকেমাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধপুনর্নির্মাণ, খাবারপানির টেকসই ও স্থায়ীসমাধানেবৃহৎজলাধারনির্মাণ, পর্যাপ্তসাইক্লোন শেল্টারনির্মাণ, উপকূলউন্নয়ন বোর্ড গঠন, একটিবাড়িএকটিখামারপ্রকল্পেরআদলেএকটিবাড়িএকটি সেল্টারকার্যক্রম, নদীরচরেব্যাপকহারেবৃক্ষরোপণকর্মসূচিগ্রহণ ও সুন্দরবনরক্ষায়কার্যকরব্যবস্থা গ্রহণকরতেপারলেএখানকারমানুষেরজীবন ও জীবিকারসুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close