বাকৃবি প্রতিনিধি

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা

বাকৃবিতে ৩ বছরে ঘাটতি ৩ কোটি টাকা

নিয়মবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল (বাকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে তিন বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে একই সুবিধা পেতে নতুন করে আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ২২৯ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নতুন আবেদনকারীদের এ সুবিধা দিলে প্রতি বছর আরো ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর তোয়াক্কা না করেই ২০১৬ সালে ৫০ জন অধ্যাপককে উচ্চতর বেতন স্কেল দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে বাকৃবি প্রশাসন। পে-স্কেল বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশে এবং ওই ৫০ জন অধ্যাপকের চাপে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর এমনটা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে ওই একই সুবিধা পেতে অধ্যাপকদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপাচার্যকে নানাভাবে চাপ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হলে ওই সময়ে যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পূর্বের বেতন কাঠামো অনুযায়ী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্য ‘বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি’ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সময়ে ৫৫০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আবেদন করলেও কমিটির সুপারিশে ২ শতাধিক শিক্ষক, ১ শতাধিক কর্মকর্তা এবং ৮০ জনের অধিক কর্মচারীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। তবে যদি কোনো অডিট হয় তাহলে তারা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে এমন মুচলেকা নেয় ওই কমিটি। তবে ২০১৬ সালে অডিট আপত্তি আসলেও তা এখনো বাতিল করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলমান সান্ধ্য কোর্স বন্ধসহ ১৩ দফা পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিধিবিধান এবং সরকারের নিয়মনীতি প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য। এ ছাড়া আরো বলা হয়েছে বিধি বহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’ নামে সুবিধা দেওয়া এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় নয়। সরকারি আর্থিক বিধিমালা অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রতিপালনীয়।

২০১৫ সালে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস। কী কী মানদ-ে ওই ৪১৮ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাড়তি সুবিধা দিতে সুপারিশ করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে আমি ওই কমিটিতে ছিলাম। এরপরে অনেকগুলো কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছি। এত আগের বিষয়ে মনে থাকার কথাও না। আমার কিছুই মনে নেই।’

এ বিষয়ে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির বর্তমান সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর পর শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কোনো নীতিমালা নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মও নেই। নতুন আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন করে যারা আবেদন করেছে তাদের কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

আর যারা সুবিধা পাচ্ছেন তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close