বরিশাল প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

বাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার শিক্ষার্থীরা

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নেতা তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের (বাকসু) নির্বাচন হচ্ছে না দেড় যুগ। সর্বশেষ ২০০২ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় এই বিদ্যাপীঠে। এখন এ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে বিএম কলেজে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো।

চলছে ঢাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া, সে কারণে বাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এ দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। নির্বাচন চেয়ে কলেজ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি, বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্র নেতারা। বাকসু নির্বাচনের প্রশ্নে একমত কলেজ প্রশাসনও। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক অভিভাবকদের গ্রিন সিগন্যাল না মেলায় সচল হচ্ছে না বাকসুর নির্বাচন।

১৯৫২ সালে কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা হয় বিএম কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু)। এর পর থেকেই বিভিন্ন সময় সংঘটিত সব আন্দোলনের সম্মুখ ভাগে ছিলেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে একটি দক্ষিণাঞ্চলের ছাত্র রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত বাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসরা আজ জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বলরাম পোদ্দার, বিএনপির বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, মাহাবুবুল হক নান্নুর মতো অনেক নেতাই আজ দেশ পরিচালনাসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় নেমে আসে স্থবিরতা। যার দরুন ২০০২ সালের পর থেকে ১৭ বছর ধরে বাকসু নির্বাচনের আমেজ নেই ছাত্র রাজনীতির আঁতুড়ঘর ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজে। বিএম কলেজ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ২০০২ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণমূলক ওই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান সেন্টু। এছাড়া আবু জাফর সিকদার বাদল জিএস এবং নেয়ামুল ইসলাম এজিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়নি। এদিকে ২০১১ সালের জুন মাসে গঠন হয়েছিল ছাত্র কর্ম পরিষদ। এ পরিষদকে অবৈধ ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেছিলেন সমাজসেবা সম্পাদক অনিক সেরনিয়াবাত, সহ-পরিবহন সম্পাদক আতিকউল্লাহ মুনিম ও সহ-ম্যাগাজিন সম্পাদক বাবু সেরনিয়াবাত। এর তিন দিন পরে ছাত্র ইউনিয়ন বিএম কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিশির ও ছয় মাস পরে পদত্যাগ করেন এজিএস সৈয়দ আবিদ। নির্বাচনের দাবি জানিয়ে পাঁচজন পদত্যাগ করলেও তিন মাসের অবৈধ কর্মপরিষদ পার করে ছয় বছর। অবশ্য এর মধ্যে সব সময়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ আর কলেজ প্রশাসনের অনিচ্ছার কারণে আন্দোলন কখনই জমে ওঠেনি। তবে সম্প্রতি (ঢাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্মরকলিপি প্রদান এবং মিছিল ও সমাবেশ করে আসছে বিভিন্ন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। বাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে ছাত্র মৈত্রী বিএম কলেজ শাখার সভাপতি জয় চক্রবর্তী বলেন, বাকসু না থাকায় ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও অধিকারের সুষ্ঠু পরিবেশ হারিয়ে গেছে। আমরা চাই অচিরেই বাকসু নির্বাচন হোক। ছাত্র ইউনিয়ন বিএম কলেজ শাখার সভাপতি কিশোর কুমার বালা বলেন, বাকসু নির্বাচন হলো ছাত্র শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক চর্চার অন্যতম একটি মাধ্যম। ছাত্র প্রতিনিধি হয়েই জাতীয় রাজনীতির হাতেখড়ি হয়ে থাকে। বিএম কলেজ ছাত্রনেতা ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের যে দাবি তুলেছেন তাতে আমি একমত। ছাত্র কর্মপরিষদ থেকে পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতা অনিক সেরনিয়াবাত বলেন, এখনই ছাত্র সংসদের নির্বাচন দরকার। কেননা এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, আমরা এখন বাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ভাবছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close