নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

পোড়া মবিল নিয়ে সড়কে তান্ডব

কর্মবিরতি পালন করতে বাধ্য করা হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে চলাচলরত পরিবহনগুলোকে

‘কর্মবিরতি’ না মেনে রাস্তায় নামায় নির্বিচারে গাড়িতে আলকাতরা-মবিল নিয়ে তান্ডব চালিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি অনেক চালকের মুখেও মাখা হয়েছে আলকাতরা-মবিল। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও বাদ যায়নি এমন জঘন্য কা- থেকে। গতকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ৪৮ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ শুরু হওয়ার পর থেকে চলে এদের তা-ব। এদের হাত থেকে রেহাই পায়নি কলেজশিক্ষার্থীরাও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে বা চিটাগাং রোড থেকে যেসব গাড়ি ঢাকা অভিমুখে আসে (বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ি ও মিনি ট্রাক) সেসব গাড়ি যাত্রাবাড়ী মোড় দিয়ে ঢুকতেই বাধা দেন পরিবহন শ্রমিকরা। মানিকনগর, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, গুলিস্তানের দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকেও আটকে দেওয়া হয় যাত্রাবাড়ী মোড়ে। যাত্রাবাড়ীর ব্যারিকেডের সামনে আসতেই প্রথমে গাড়ির ওপর মবিল ঢেলে দেওয়া হয়। আবার গাড়ির চালকের গায়েও ঢেলে দেওয়া হয় তা। এভাবে কর্মবিরতি পালন করতে বাধ্য করা হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে চলাচলরত পরিবহনগুলোকেও। আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেওয়া হয়েছে দাবি করলেও কোথাও কোথাও অ্যাম্বুলেন্সও বাধা পাওয়ার খবর মিলেছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বা তাদের কাছে ঘেঁষতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। দুপুর পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। সকালে কয়েকটি গাড়ি চলতে দেখা গেলেও আলকাতরাকা-ের পর থেকে কেবল দু-একটা গাড়ি আসতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে যানবাহন না পেয়ে এলাকার কর্মজীবী মানুষদের পায়ে হেঁটে বা রিকশায় গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর মেহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও ১, টেকনিক্যাল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই।

রাজধানীজুড়ে কোনো ধরনের গণপরিবহন না চলায় নগরবাসীর ভোগান্তি বুঝে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ‘মিশন’ পূরণ করছে রিকশা ও সিনএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো। তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত ভাড়া হাঁকছে তারা। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা সেলিম আহমেদ বলেন, ‘পল্টনে অফিস, ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছি, রিকশাওয়ালার কাছে জানতে চাইলাম পল্টন কত নেবা, তার উত্তর, পল্টন ৪০০ টাকা।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা না ভাবলে দেশ এগোবে না। ঢাকা শহরে সংসার করাই আমাদের মতো মানুষের জন্য কষ্টকর। তারপর যদি দুদিন পরপর এমন ধর্মঘট হয়, তাহলে আমাদের জীবন আরো কঠিন হয়ে যায়। এমনই যানজট এড়াতে দ্রুত যাওয়ার জন্য যাত্রা খরচ বাড়তি থাকে।’

কল্যাণপুরের বিআরটিসি কাউন্টারে দেখা গেছে কয়েক শ মানুষের ভিড়, রুমানা নাজনীন নামের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান, ‘আমি বনানী যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডটার্ম পরীক্ষা চলছে। আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে পরীক্ষা দিতে পারব না। ঘণ্টা-দুয়েকের বেশি হলো অপেক্ষা করছি। পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার পরীক্ষার টাকা আবার দিতে হবে, এই টাকা কি শ্রমিক ফেডারেশন দেবে?’

আগারগাঁও মোড়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রোকেয়া জাহান বলেন, ‘মিরপুর-১০ নম্বর থেকে হেঁটে এসেছি। মতিঝিলে অফিস কিন্তু যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরুষরা তো তাও হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হয়েছে, কিন্তু নারী ও বয়স্কদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হঠাৎ করে শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।’

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা আট দফা দাবি উত্থাপন করেছি। সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবি মানা হয়নি। যে কারণে আমরা পাস হওয়া আইনের কিছু ধারার সংশোধন ও উত্থাপিত আট দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ কর্মসূচিতে বিক্ষোভ মিছিল হবে, তবে পিকেটিং করা হচ্ছে না। আমাদের কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে থার্ড পার্টি, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তবে তা রুখে দেওয়া হবে। সে জন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে রয়েছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close