এম এ রউফ, সিলেট

  ০১ মে, ২০১৮

রমজান মাস টার্গেট

ভেজাল ঘি তৈরিতে সক্রিয় অসাধুচক্র

ভেজাল ঘিয়ে সয়লাব সিলেটের হাটবাজার। রমজান মাস টার্গেট করে ভেজাল ঘি তৈরি করতে সক্রিয় অসাধুচক্র। পামঅয়েলের সামান্য পরিমাণে ঘি ফ্লেভার ও রং মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে আসল গাওয়া ঘি। তবে এ বিযয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডালডা আর পামঅয়েলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে ঘি, ফ্লোভার আর রং মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে আসল গাওয়া ঘি। আর এসব ঘি বাহারি নাম দিয়ে কৌটাজাত করা হচ্ছে। এরপর বিএসটিআইর নকল সিল বসিয়ে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে সিলেট নগরের বিভিন্ন হাটবাজারে। রমজান উপলক্ষে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর তৈরি এসব ভেজাল ঘিয়ে এখন সয়লাব হয়ে পড়েছে বাজার।

সরজমিনে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, মহাজনপট্টি, কালীঘাট, আম্বরখানাসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ দোকানে খুচরা ও পাইকারি দরে ভেজাল ঘি বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল ঘিয়ের মধ্যে নির্মল ঘোষ ঘি, নূরজাহান ঘি, জননী ঘি, পান্থ ঘি, শাহি স্পেশাল গাওয়া ঘিসহ অন্তত ২০টি ভুঁইফোঁড় ও অবৈধ কোম্পানির ঘি বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত এমন তিন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, নগরের রায়নগর, শিববাড়ি, নয়াবাজার, লালদিঘিরপার, ফনিটোলা, মদিনা মার্কেট এলাকায় অন্তত ১৫টি ভেজাল ঘিয়ের কারখানা আছে। এর বাইরেও শহরতলিতে বস্তিসহ কয়েকটি এলাকায় আরো ১৫-২০টি কারখানা আছে। এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত ঘি নগরের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামীণ হাটবাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণত প্রতিটি কৌটায় ৯০০ গ্রাম ঘি থাকে। এ পরিমাণ ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি দেওয়া হয়। এ মিশ্রণে সামান্য পরিমাণে রং ব্যবহার করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীঘাট এলাকার এক বিক্রেতা জানান, ভালো মানের প্রতি কেজি ঘিয়ের দাম দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। তবে ভেজাল ঘি কেজিপ্রতি ৭৫০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ভেজাল ঘি পাইকারি দরে খুচরা বিক্রেতারা ৪০০-৫০০ টাকায় কেনেন। বেশি লাভ হওয়ায় ভালো মানের ঘিয়ের চেয়ে খারাপ ঘি বিক্রিতেই বেশি উৎসাহ ব্যবসায়ীদের।

বাজারে বিক্রির জন্য রাখা ঘিয়ের কৌটায় দেখা গেছে, প্রতিটি কৌটায় ‘১০০ ভাগ খাঁটি ঘি’ বাক্যটি লেখা। সঙ্গে ঘিয়ের নামসংবলিত কাগজে বিএসটিআইয়ের নকল সিল মুদ্রণ করে রাখা হয়েছে। তবে সে কাগজের কোনো কোনোটিতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা নেই। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় খিচুড়ি ও আখনিসহ নানা ধরনের বাহারি ইফতারসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এসব তৈরিতে অধিকাংশ হোটেল মালিক ভেজাল ঘি কেনেন।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘যেকোনো রং-ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যদ্রব্যে মিশ্রণের রং ভালো মানের না হলে সেটিও দুই মাসের বেশি সময়ে কার্যকারিতা হারিয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর যেহেতু ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে, তাই সেখানে ভালো রং মেশানোর প্রশ্নই আসে না। এ কারণে এসব ঘি খেয়ে পেটের অসুখ থেকে শুরু করে যকৃতের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

বিএসটিআই সিলেটের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘কিছু ভুঁইফোঁড় অসাধু ব্যবসায়ী আড়ালে থেকে এসব ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছে। এর আগে একাধিকবার এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর জরিমানা এবং জেলও হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, ‘ভেজাল ঘি তৈরি করার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে শিগগির খোঁজ নিয়ে এসব ভেজাল ঘি উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist