আবু সুফিয়ান

  ০৪ এপ্রিল, ২০২৪

অদ্ভুত ব্যাখ্যার শেষ কোথায়?

বাংলাদেশের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের মান নিয়ে আগের দিনই প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুমিনুল হক। এক দিন না যেতেই তার সঙ্গে সুর মেলালেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চ্যালেঞ্জটা পান না বলেই দাবি করলেন অধিনায়ক। চট্টগ্রাম টেস্টেও শ্রীলঙ্কার কাছে ১৯২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টে তো রীতিমতো বিধ্বস্তই হয়েছিল দলটি। দুই টেস্টেই ব্যাটারদের ধৈর্যের ঘাটতি দেখা গিয়েছে প্রকটভাবে। মনোযোগের ঘাটতিও ছিল উল্লেখ করার মতো। ওয়ানডে এমনকি টি-টোয়েন্টি মেজাজেই খেলতে দেখা যায় তাদের। যোগ দেন আত্মাহুতির মিছিলে। পর্যাপ্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলার কারণেই এমনটা হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ টেস্টে ক্রিকেটে পা দিয়েছে প্রায় দুই যুগ শেষ হতে চলল। শিশু-কৈশোর পেরিয়ে ক্রিকেট এখন পা দিয়েছে যৌবনে। কিন্তু বাস্তবতা তো সেটা বলে না। দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশের শিশুসুলভ খেলা তত প্রকট হচ্ছে। যেখানে তাদের পরে টেস্টে ক্রিকেটে এসে তরতর করে উন্নতি লাভ করছে তাদের ছেড়ে ছোট দলগুলো। সেটা দেখে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শিক্ষা হয় না। তারা আছে শুধু যদি কিন্তুতে! ম্যাচ হারের পর এক অদ্ভুত ব্যাখ্যা দাঁড় করান দল নায়করা। এভাবে আর কতকাল চলবে।

এদিকে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে আগ্রহীই নন টাইগাররা। কেন খেলেন না, তার পক্ষেও যুক্তি দেখান অধিনায়ক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান আরো বাড়ানোর তাগিদ দেখিয়ে বললেন, ‘ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের উইকেট যদি আরেকটু বেটার হয়, (আন্তর্জাতিক অঙ্গনে) যেরকম কন্ডিশনে আমরা খেলব- চ্যালেঞ্জগুলো যদি ফেইস করতে পারি, তাহলে খুব ভালো হয়।’ মানসম্পন্ন ম্যাচ খেলতে পারলে উন্নতির জায়গা সব সময়ই দেখছেন অধিনায়ক, ‘আমার কাছে স্টিল মনে হয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা যেরকম চ্যালেঞ্জ আমরা এখানে ফেইস করি, ওইরকম কোয়ালিটি ম্যাচ সেখানে আমরা খেলতে পারি না। আমাদের প্লেয়ারদের যদি আরো ম্যাচ করে খেলতে পারি যে আন্তর্জাতিকের সঙ্গে, তাহলে অবশ্যই ভালো হবে। যত বেশি ম্যাচ খেলব, কিছু না কিছু তো উন্নতির জায়গা থাকেই।’ তবে এই ঘাটতি পূরণে ‘এ’ দলের সফর আরো বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখছেন শান্ত, ‘আমার কাছে যে জিনিসটা সবচেয়ে কার্যকরী মনে হবে তখনই, যখন আমরা কোনো সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে ওই জায়গায় এ টিমের সঙ্গে বাংলাদেশ এ টিম পাঠাতে পারি। তাহলে যেসব প্লেয়ার শুধু টেস্ট খেলছে বা যারা শুধু একটা-দুইটা ফরম্যাট থেকে তারা যদি আগে ম্যাচ খেলতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় ভালো হবে। কন্ডিশন ও প্রস্তুতি ভালো হবে। যারা তিন ফরম্যাটে খেলে তাদের জন্য কঠিন। তাদের মেন্টালি প্রস্তুতি নিতে হবে। যারা শুধু টেস্ট খেলে যদি আমরা এ টিম একটা পাঠাতে পারি, তাহলে এই জায়গাটাতে মনে হয় আরেকটু উন্নতি হবে।

তবে ফলাফল যা হয়েছে কিংবা যেমন ব্যাটিং করেছেন টাইগাররা, তার চেয়ে নিজেদের আরো ভালো বলেই দাবি করলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে উন্নতির জায়গায় দেখছেন তিনি, ‘আমি বলব যে, দুইটা ম্যাচে ওরা (বাংলাদেশের ব্যাটার) যেরকমভাবে ব্যাটিং করেছে আমরা এত খারাপ ব্যাটার না। আমাদের সামর্থ্য এর থেকে আরো বেটার আমার কাছে মনে হয়। এর সঙ্গে যোগ করতে চাই টেকনিক্যালি, মেন্টালি আরো বেশি উন্নতির জায়গা আছে।’ টেস্ট ক্রিকেট যে ধৈর্যের খেলা, তা ভুলেই যান বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মনোযোগের ঘাটতিও স্পষ্ট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলার ঘাটতিকেই এর কারণে বলে উল্লেখ করছেন অনেকে। টানা সাদা বল খেলে হুট করে লাল বলে চলে আসায় মানিয়ে নিতে পারছেন বলেও মনে করছেন অনেকে। শান্তও বলেছেন একই সুরে কথা।

‘বর্তমান সময়ে যেরকম খেলা চলছে, আমাদের এগুলো অ্যাডজাস্ট করেই খেলতে হবে। হ্যাঁ যারা তিন ফরম্যাট খেলে না তাদের হয়তো প্রস্তুতি একটু হয়তো নেওয়ার সুযোগ থাকে। এখন সামনে যত খেলাই আছে আমাদের এভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এভাবেই আমরা তিন ফরম্যাট একসঙ্গে কীভাবে অ্যাডজাস্ট করে খেলতে পারি ওইটা চিন্তা করে অনুশীলন, প্রস্তুতি নেওয়া উচিত,’ বললেন শান্ত। এছাড়া তরুণদের অনভিজ্ঞতার ব্যাপারটিও তুলে ধরেন অধিনায়ক, ‘মানসিকতার ব্যাপারে তরুণ, একদমই তরুণ, বেশ কিছু নতুন প্লেয়ার কিন্তু খেলছে এই দলে। খুব বেশি অভিজ্ঞও না। ওই অভ্যাসটা হয়তো আস্তে আস্তে খেলতে খেলতে চলে আসবে। আমার মনে হয়, যে প্লেয়াররা আছে, সবার মধ্যে খেলার ইচ্ছাটা আছে, আগ্রহ আছে যে, কীভাবে তারা আরো বেটার ক্রিকেট খেলতে পারে। এই দল যদি আস্তে আস্তে আরো সময় যায় দেখবেন যে, আরো বেটার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close