দৃষ্টিনন্দন ওভারহেড কিকে দলকে এগিয়ে নিলেন রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো। তিন ব্রাজিলিয়ানের গোছাল আক্রমণ থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করলেন মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো। আবাহনীকে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয় তুলে নিল প্রিমিয়ার লিগের চারবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। এদিকে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে মোহামেডান। পাঁচ ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় ড্র। ১১ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে থাকল বটে, কিন্তু আবাহনীর বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা বসুন্ধরা কিংস এগিয়ে গেল ৪ পয়েন্টে।

গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২-০ গোলে জিতেছে কিংস। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের সব জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরো মজবুত করেছে অস্কার ব্রুসনের দল। ২০২১ সালের স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে সর্বশেষ কিংসের বিপক্ষে জিতেছিল আবাহনী। এরপর এ নিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৬ ম্যাচ কিংসের কাছে হারল আকাশি-নীল জার্সিধারীরা

দুই বড় দলের লড়াইয়ে শুরুর দিকে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল আবাহনীই। দ্বিতীয় মিনিটেই মাঝমাঠের একটু ওপর থেকে আচমকা দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেন জোনাথন ফের্নান্দেস, কিন্তু আনিসুর রহমান জিকোকে পরাস্ত করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ষষ্ঠ মিনিটে হৃদয়ের ক্রসে ওয়াশিংটন ব্রান্ডাওয়ের হেড ঝাঁপিয়ে কর্নার করে দেন জিকো। কর্নারে মিলাদ শেখ সুলেমানির দুর্বল হেড অনায়াসে গ্লাভসে নেন কিংস গোলরক্ষক।

২৪ মিনিটে রবিনিয়োর ক্রসে ভালো জায়গা থেকে রাকি হোসেন হেড করেন, তবে এক ড্রপের পর বলের গতি কিছুটা কমে যায়, ঠেকিয়ে দেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। কিন্তু দুমিনিট পর আর পারেননি শহিদুল। দামাশেনোর কর্নারে দূরের পোস্ট থেকে হেড পাসে বল বাড়ান দোরিয়েলতন, চোখ ধাঁধানো ওভারহেড কিকে শহীদুলকে হতভম্ব করে দিয়ে জাল খুঁজে নেন রবিনিয়ো। ৪০ মিনিটে তপু বর্মনের লং পাস ধরে রবিনিয়ো বাড়ান দোরিয়েলতনের উদ্দেশে। বক্সে ঢুকে এ ব্রাজিলিয়ানের নেওয়া বাঁ পায়ের শট শহীদুলকে ফাঁকি দিয়ে পোস্টে লেগে ফিরে। দ্বিতীয়ার্ধে দুদলের শুরুটা হয় কিছুটা সাদামাটা। ৬৫ মিনিটে আবাহনীর কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের কোনাকুনি শট যায় বাইরে।

৭২ মিনিটে তিন ব্রাজিলিয়ানের সম্মিলিত আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে কিংস। রবিনিয়োর পাস দোরিয়েলতনের পা ঘুরে পেয়ে যান দামাশেনো। নিখুঁত নিচু শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। বক্সে আবাহনীর চার ডিফেন্ডার বলতে গেলে ছিলেন একেবারেই নিষ্ক্রিয়! শেষ দিকে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে আবাহনী। ৮১তম মিনিটে আসাদুজ্জামান বাবলুর দারুণ হেড গোললাইন থেকে ফেরান দামাশেনো। একটু পর এনামুল গাজীর শট ফিরিয়ে কিংসকে ম্যাচে রাখেন জিকো। এর পরপরই পাল্টা আক্রমণে ওঠা দামাশেনোর শট ঝাঁপিয়ে আটকে ব্যবধান বাড়তে দেননি শহিদুল।

৮৮ মিনিটে কর্নেলিয়াসের শট আঙুলের টোকায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে জিকো বের করে দেন। নির্ধারিত সময়ের পর ৮ মিনিটের যোগ করা সময়েও আবাহনী পারেনি জিকোকে পরাস্ত করতে। টানা দুই জয়ের পর ফের তেতো স্বাদ পাওয়া আবাহনী পাঁচ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে।

এদিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাদামাটা ফুটবল খেলল মোহামেডান। ধারহীন আক্রমণে জালের নাগাল না পেয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করল তারা। আরেক ম্যাচে শুরুর মলিনতা শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব দ্বিতীয়ার্ধে কাটিয়ে উঠল সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে। দুই হারের পর প্রিমিয়ার লিগে জয়ে ফেরার আনন্দ সঙ্গী হলো তাদের।

ময়মনসিংহে শুরু থেকে দুদলই খেলতে থাকে নিষ্প্রাণ ফুটবল। প্রথমার্ধে ভালো সুযোগটি চট্টগ্রাম আবাহনী পায় ২৩ মিনিটে, কিন্তু মান্নাফ রাব্বির শট কাঁপায় বাইরের জাল। দ্বিতীয়ার্ধেও অনেকটা একইভাবে চলতে থাকে মাঠের খেলা। সুলেমানে দিয়াবাতে, এমানুয়েল সানডেদের আক্রমণ বক্সের ভেতরে-বাইরে মুখ খুবড়ে পড়তে থাকে। রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২-০ গোলে হারিয়েছে শেখ জামাল।

চলতি লিগে ধুঁকতে থাকা ব্রাদার্স প্রতিরোধের দেয়াল তুলে শেখ জামালকে আটকে রাখে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত। সতীর্থের হেড পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে নিখুঁত টোকায় প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ ভাঙেন সাজ্জাদ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের গোলটিও সাজ্জাদের। বাম দিক দিয়ে একক প্রচেষ্টায় আক্রমণ শাণানো ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের পাসে গোলমুখ থেকে স্রেফ টোকা দেওয়ার কাজটুকু করেন তিনি।

"