আরাফাত শাহীন

  ২২ জুলাই, ২০১৭

টুনটুনির বাসা

আদিবের টুনটুনির বাসা খুঁজে বেড়ানোর খুব শখ। এই কাজটি এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। সুযোগ পেলেই সে বন-বাদাড় চষে বেড়াবে টুনটুনির বাসার সন্ধানে। কোনো দিন দেখা যায়, স্কুল ছুটির পর সব ছেলেরা বাড়ি ফিরলেও আদিবের কোনো পাত্তা নেই। সে হয়ত চলে গেছে কোনো সুদূর জঙ্গলে পাখির বাসার খোঁজে!

প্রথম প্রথম এই কাজটি আদিব একা একাই করত। তবে একা একা পাখির বাসা বিশেষ করে টুনটুনির বাসা খুঁজে আদিব কুলিয়ে উঠতে পারে না। পাখির পেছন পেছন ছুটে তার বাসার সন্ধান করা, নিয়মিত বাসার দিকে নজর রাখা মোটেই একজনের কাজ নয়। আদিব তাই তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রনিকে নিয়ে একটি টিম গঠন করেছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট এই টিম সকাল-সন্ধ্যা ছুটে বেড়ায় টুনটুনির বাসার সন্ধানে। অনেকেই পাখির বাসা খুঁজে বের করে তা ভেঙে ফেলে নয়ত পাখির বাচ্চাগুলো ধরে নিয়ে এসে কষ্ট দেয়। আদিব তাদের মতো নয়। সে শুধু বাসা খুঁজে বের করে আর সুযোগ পেলে পাখির নরম তুলতুলে ছানা বাসা থেকে বের করে বড়বড় চোখ করে দেখতে থাকে। তারপর আবার ওদের বাসার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। এর বেশি কোনো কিছুই সে করে না। যারা পাখিদের কষ্ট দেয় আদিব তাদের কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। পাখিদের যারা কষ্ট দেয় তারা তো অমানুষ! স্কুল ছুটির পর আদিব আজ একটি বাসা খুঁজতে যাবে। ওর বন্ধু রনি এই বাসার সন্ধানদাতা। বড়খালের পাশেই কাঁটাঝোপে ছাওয়া একটি বাগানের ডুমুর গাছে নাকি বাসা বেঁধে বসবাস করছে দুটি টুনটুনি। রনির স্থির বিশ্বাস এই। স্কুল ছুটি হলেই দুজনে সোজা চলে যাবে খালপাড়ে। দুজনের সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত পাস হতে মোটেই সময় লাগল না। খালপাড়ে পৌঁছে দুই বন্ধু সময় নষ্ট না করেই কাজে নেমে পড়ে। টুনটুনির বাসা খুঁজে বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। গাছের পাতার সঙ্গে একেবারে মিশে থাকে। চট করে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। বাসাটি খুঁজে বের করতে তাই বেশ সময় লেগে যায়। তবে খুঁজে পাওয়ার পর দুই বন্ধুর সে কী আনন্দ! আনন্দে ওদের নাচতে ইচ্ছা করে।

আদিব চুপটি করে গিয়ে বাসার ভেতর উঁকি মারতে চেষ্টা করে। ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে মা পাখিটা ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়। তবে খুব বেশি দূরে যায় না। কাছেই একটা গাছের ডালে বসে ওদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। বাসার ভেতর চোখ পড়তেই আদিব বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে পায় ছানাগুলো গোলগোল চোখ করে উপরের দিকে চেয়ে আছে। ছানাদের দেখে দুই বন্ধুর ঠোঁটে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। সবগুলো ছানা বাসা থেকে একে একে বের করে হাতের তালুর ওপর রাখে ওরা। মোট চারটি ছানা। সবগুলো ছানা মিশমিশে কালো। খাবার জন্য মুখ হাঁ করে বাড়িয়ে দিয়ে আছে। আদিব আর রনির ছানাগুলোকে দেখে বড্ড ভালো লাগে। সেদিনের মত ছানাগুলোকে বাসায় ঢুকিয়ে রেখে বাড়িতে ফিরে আসে দুই বন্ধু। দুই দিন পর রনি এসে আদিবকে বলে, ‘দুই দিন হলো আমরা বাসাটি দেখতে যাইনি। চল, আজ যাওয়া যাক।’ ‘হ্যাঁ, তাই চল’ আদিব সম্মতি দিয়ে বলে। এই দু’দিন পড়াশোনা নিয়ে ওদের দারুণ ব্যস্ততায় কেটে গেছে। পাখির বাসাটির কথা ওদের কারোই মনে ছিল না। আদিবের চোখের সামনে ভাসতে থাকে মিশমিশে কালো রঙের বাচ্চার গোলগোল চোখের চাহনি। তাদের তুলতুলে নরম শরীর ছোঁয়ার লোভ সংবরণ করা সত্যিই কঠিন।

দূর হতে জায়গাটি দেখে ওদের বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে। জায়গাটি একদম ফাঁকা। গতকালই বোধহয় পরিষ্কার করা হয়েছে। কোনো ঝোপঝাড়ের চিহ্নটুকুও পর্যন্ত নেই! আদিবের বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চায়। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নেয় সে। দুজনে মিলে খুঁজতে শুরু করে দেয়। কিছুদূরেই ডুমুর গাছগুলোকে কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বাসাওয়ালা গাছটিকে খুঁজে বের করতে ওদের খুব একটা বেগ পেতে হলো না। দ্রুত বাসার ভিতরে উঁকি মারে ওরা দুজন। খানিকক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা। বাসার ভেতরে কয়েকটি হাড়গোড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। দলে দলে পিঁপড়েরা এসে সেই হাড়গুলোকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের বাসায়। কষ্টের তীব্রতা সহ্য করা ওদের শিশুমনের পক্ষে অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অব্যক্ত বেদনায় মুষড়ে পড়ে দুই বন্ধু। অবশিষ্ট হাড়গুলোকে মাটিচাপা দিয়ে রাখে ওরা। আদিব কোনো কথা বলতে পারে না। মিশমিশে কালো ছানাগুলোর মতো ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে খালের বয়ে যাওয়া পানির দিকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist