মো. সোহাগ আলমগীর

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

মেট্রোরেলে ঘুরে এলাম

পরিবার নিয়ে আনন্দময় মেট্রোরেল ভ্রমণ। পরিবারসহ প্রথমে আমরা উত্তরা রূপায়ণ থেকে রিকশা করে উত্তরা উত্তরে মেট্রোরেল স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। লিফটে করে দোতলায় উঠলাম। লিফটে উঠতে ভয়, তবে লিফটে অনেক যাত্রী ছিল। লাবিব একটু চঞ্চল ছেলে, তাই ওর ভয় বলতে কোনো কিছু নেই বললেই চলে। আমি লাবিবকে বললাম, লাবিব তুমি ভয় পাও না। লাবিব বলল, বাবা আমার তো অনেক সাহস, আমি ভয় পাই না। আমি হেসে দিলাম, তবু ওকে নিয়ে আমাদের ভয় ভয় লাগছিল। আমি দেখতে পেলাম মেট্রোরেলে স্টেশনে ওপরে উঠতে সাধারণ সিঁড়ি চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট। লিফট থেকে নেমে দেখি লম্বা লাইন মেট্রোরেলের টিকিট কাটার জন্য এটা বাংলাদেশ না মনে হলো এটা একটা উন্নয়নশীল ধনী দেশ।

শুনেছি তবে বাস্তবে দেখিনি বলে বিশ্বাস হয়নি। তবে বাস্তবে দেখে বিশ্বাস না করে পারলাম না। শেখের মেয়ের উন্নয়নের ধারা বিশ্বের উন্নয়নে হার মানিয়েছে। এটা কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না। অন্য লোকজনের মতো আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। এদিকে লাবিব দৌড়াদৌড়ি করছে। মনে হচ্ছে একটি উন্নয়নের স্মার্ট রেলস্টেশন। এবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাঞ্চকাটের জন্য রুমের কাছে পৌঁছে গেলাম অর্থাৎ টিকিট কেনার পালা। সেখানে দেখি কাচের রুমের ভেতরে কম্পিউটার ম্যান আমাকে জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাবেন? আমি বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাব। তখন বলল কজন আমি বললাম দুজন। কাউন্টারম্যান ১৮০ টাকা চাইল, আমি ২০০ টাকার নোট দিলাম। কম্পিউটার ম্যান আমাদের দুটি পাঞ্চ কার্ড দিল এবং ২০ টাকা ফেরত দিল। আমি কাউন্টার ম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাবিব ও লাবিবের মাকে নিয়ে মেট্রোরেলের উদ্দেশে লিফটে করে তৃতীয়তলায় পৌঁছে গেলাম। পাঞ্জ করার মেশিনে পাঞ্জ করে মেট্রোরেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখি মেট্রোরেল এসে গেল। ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের দরজা ও গেটের দরজা এক হয়ে গেল। আমরা ট্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়লাম।

আমাদের ভয় ভয় লাগছিল। দেখি ট্রেনের ভেতরে অনেক ভদ্রলোক ও ভদ্র মহিলা কেউ দাঁড়িয়ে হাতল ধরে আবার কেউ ছিটে বসে আছে। লাবিবের মাকে দেখে এক ভদ্রলোক তার আসন ছেড়ে দিয়ে লাবিবের মাকে বসতে বলল। এলিজা চিশতি ধন্যবাদ জানিয়ে লাবিবকে কোলে নিয়ে ছিটে বসল। আমি ট্রেনের ভেতরের যাত্রী হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেট্রোরেল না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব না। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। আমার আরো মনে হলো, এই যোগাযোগ ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হবে না। আমার ভালো লেগেছিল এ জন্য যে মেট্রোরেলে কোনো হকার ও ভিক্ষুক নেই। ট্রেনটিতে সুমধুর কণ্ঠে এক ভদ্র মহিলা কোন স্টেশন সামনে এবং গন্তব্যস্থল কোনটি তা বলে দিচ্ছে। এতে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্য সুবিধা হবে। যারা বধির তাদের জন্য দেখতে পেলাম ট্রেনটির ভেতরে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সব অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করছে।

লাবিব ওর মাকে বলছে, মা আমরা কি বিমানে উঠেছি। লাবিবের মা বলল, এটা বিমান না এটা মেট্রোরেল। লাবিব বলল, তাহলে এত উঁচু দিয়ে যাচ্ছে কেন? আমি হেসে দিয়ে বললাম, বাবা এটা বিমান না। এদিকে যার যার মতো ফটো সেশন করছে, কেউ পিক তুলছে। আমি ট্রেনটির ভেতরে ছবি তুললাম এবং পিক তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিলাম। ছবি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই কমান্ড দিচ্ছিল, আমি উত্তর দিচ্ছিলাম। অনেক মজা লাগছিল। যখন ফটোসেশন করছিলাম সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। আমরা একটি মেশিনের মধ্যে পাঞ্জ কার্ড ঢুকিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে গেটের হাতল খুলে গেল। যে যার মতো গেট থেকে বের হলাম। আমরাও সেখান থেকে লিফটের মাধ্যমে নিচে নেমে এলাম।

আমরা একুশে বইমেলায় ঢোকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দিল না গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা। বলল, ঠিক তিনটার সময় সবার জন্য গেট উন্মুক্ত করা হবে। আর যাদের গেট পাস আছে তারা সব সময় যেতে পারবে। তবে আমরা মন্দিরের দিক দিয়ে মেলায় ঢুকে পড়লাম। একুশে বইমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন স্টলে শিশুদের বই। লাবিব ডাইনোসরসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর বই দেখল এবং সব বই কিনে নিতে চাইল। তবে লাবিবের বই কেনার চেয়ে শুধু আইসক্রিম খাওয়ার প্রতি বেশি ঝোঁক। কারণ আইসক্রিম ওর প্রিয় খাবার। ওর মা আইসক্রিম কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে আমি আইসক্রিম কিনে দিলাম। কিছুক্ষণ পর কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে দেখা। আমরা বেশি দেরি না করে ২১ বইমেলা দ্রুত ত্যাগ করলাম। হেঁটে হেঁটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনের দিকে রওনা হলাম। এবার লিফটে না গিয়ে চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে ওপরতলায় উঠতে লাগলাম। আমাদের অনেক ভয় ভয় লাগছিল। আবার দেখি লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট পেলাম। ট্রেনের ভেতরে গিয়ে দেখি অনেক ভিড়। এবারও এক ভদ্রলোক তার আসন ছেড়ে দিয়ে লাবিবের মাকে বসতে বলল। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। এবারো আমরা কিছু ফটোসেশন করলাম। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর আমরা উত্তরা উত্তরা মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে সিএনজি করে বিমানবন্দরের রেলস্টেশনে পৌঁছে গেলাম। বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দ্রুতযান ট্রেনের টিকিট কেটে জামতৈল রেলস্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিলাম। একটা ত্রিশ মিনিটে জামতৈল স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সিরাজগঞ্জ জামতৈল স্টেশন থেকে সিএনজি রির্জাভ করে বাসায় পৌঁছে গেলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close