আহমাদ কাউসার

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

পাখির বন্ধু তুয়া

তুয়াদের বাড়িতে গাছের অভাব নেই। বাড়ির পুকুর পাড় থেকে শুরু করে আঙিনার আশপাশে অনেক গাছ। ছায়াঘেরা ওদের বাড়িতে যেমন গাছের কমতি নেই, তেমনি গাছের ডালে ডালে নানা জাতের পাখিরও অভাব নেই। দোয়েল, টিয়ে, শালিক, বক, চড়ুই, টুনটুনি নানা রকম পাখির ডাকে মুখরিত বাড়িটি। পাখির ডাক শুনেই তুয়া বলে দিতে পারে কোনটা কোন পাখি। এতসব পাখির মধ্যে তুয়ার প্রিয় পাখি টুনটুনি। তুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল থেকে এসেই সে উঠোনে দাঁড়িয়ে টুনটুন করে ডাক দেয়, আর অমনিতে অনেকগুলো টুনটুনি তার মাথার ওপর উড়তে থাকে।

তুয়াদের দুটি পুকুর আছে, দুই পুকুরের পাড়ে সারি সারি গাছ। গাছগুলোতে পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনে এক অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়। পাখিদের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ওদের বাড়িটি। তুয়া সব সময় খেয়াল রাখে কোনো পাখির কোনো ক্ষতি হলো কি না। বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটা নিষেধ তুয়াদের বাড়িতে। শীতকালে ওদের বাড়িতে পাখির সংখ্যা বেড়ে যায়। দূর দেশ থেকে অতিথি পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় ওদের বাড়িতে। তাই তুয়া শীতকালে পাখিদের ওপর বাড়তি নজর রাখে। কেউ যেন পাখিদের ডিস্টার্ব না করে এ বিষয়ে তুয়ার বিশেষ নজর থাকে।

এক শীতের সকালে তুয়া ঘুম থেকে ওঠে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে, চারজন যুবক বন্দুক হাতে পাখি শিকারে ব্যস্ত। ওদের হাতে অনেকগুলো বক, বকগুলো জবাই করা। তুয়া ওদের দেখে দৌড়ে বাড়িতে এসে তার বাবাকে বিষয়টা বলল। তুয়ার বাবা তাড়াতাড়ি করে পুকুরের পাড়ে গিয়ে দেখল ঘটনা সত্য। তুয়ার বাবা ওদের পাখি শিকার করতে মানা করল এবং এখান থেকে তাড়িয়ে দিল। এরপর থেকে তুয়া পাখিদের প্রতি আরো নজরদারি বাড়াল। কয়েক দিন পর বিকেল বেলায় তুয়া পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে ওরা আবার আসছে। ওদের হাতে বন্দুক দেখে তুয়া নিজে ওদের সঙ্গে কোনো কথা বলল না, ফের বাবাকে এসে বলল। বাবা দৌড়ে গিয়ে ওদের মানা করল কিন্তু কিছুতেই ওরা শুনল না।

ওরা পাখি শিকার করেই যাচ্ছে। তুয়া টেনশনে পড়ে গেল। এভাবে পাখি শিকার করলে পাখিরা এ বাড়ি থেকে চলে যাবে। বাড়িতে পাখির সংখ্যা কমে যাবে। ভয়ে আর কোনো পাখি এসে এখানে বাসা বাঁধবে না। এই দুষ্টু শিকারিরা কারোর কথাই শুনছে না। টিভিতে তুয়া দেখেছে পাখিদের গুরুত্ব। পাখি শিকার করা অন্যায়। তুয়া সিদ্ধান্ত নিল এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। তুয়ার স্কুলের পাশেই ইউনিয়ন পরিষদের অফিস। পরের দিন স্কুল ছুটি হলে তুয়া সোজা চেয়ারম্যানের অফিসে গেল। সালাম দিয়ে অফিসে প্রবেশ করল। চেয়ারম্যানকে সেই দুষ্টু শিকারিদের কথা জানাল।

চেয়ারম্যান তুয়ার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল এবং পাখি শিকারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দিল। পরের দিন চেয়ারম্যান তুয়াদের বাড়িত গেল এবং সমস্ত বাড়ি ঘুরে দেখল। এত পাখি দেখে চেয়ারম্যান অবাক হলো। তুয়াদের বাড়ি থেকে ফিরে চেয়ারম্যান মাইকিং করে দিল, এই গাঁয়ে পাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষেধ। যদি কোনো ব্যক্তি পাখি শিকার করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। তারপর থেকে আর কোনো শিকারিকে পাখি শিকার করতে দেখা যায়নি তুয়াদের বাড়িতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close