শাহেদ জাফর হোসেন

  ২০ জুন, ২০২০

মামার অভিযান

ফজলু মামা ঘোষণা দিয়েছেন আজকে অমাবস্যা রাতে তিনি শ্মশানে গিয়ে একা একা থাকবেন এবং কাল সকালে বোতলে করে একটি ভূত ধরে আনবেন।

একা মানে একাই।

সঙ্গে কেউ থাকবে না। তবে তার ভাগ্নে-ভাগ্নিরা কেউ সঙ্গে যাওয়ার জন্য বিশেষ আবদার করে তখন তিনি তা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

ফজলু মামা খেয়ালি মানুষ। বিয়েশাদি করেননি। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ান। চাকরিবাকরি করেন না। নানার রেখে যাওয়া পেনশনের টাকা আর জমিজমা দিয়েই এখনো বেশ কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবন।

সন্ধ্যায় বাসার ছাদে ফজলু মামা সব ভাগ্নে-ভাগ্নিদের জরুরি তলব করলেন। তলবের বিষয় তার শ্মশানযাত্রা।

মামা পাঁয়চারি করতে করতে বললেন,

তোরা কি কেউ যাবি আমার সঙ্গে?

কেউ কোনো কথা বলল না। চুপচাপ থাকল সবাই।

কী হলো কেউ কোনো কথা বলছিস না কেন? তাহলে কি ধরে নেব আমার ভাগ্নে ভাগ্নিরা সব ভীতুর ডিম!

তা হবে কেন? আমরা ভীতুর ডিম নই। বলল রবিন।

তাহলে আমার সঙ্গে যেতে চাচ্ছিস না কেন তোরা?

সবাই আবার চুপচাপ।

সবাই জানে ফজলু মামার সাহসের খবর। যে রাতে ইলেকট্রিসিটি না থাকলে একা একা সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাদে যায় না। তেলাপোকা দেখে ভয় করে। সে যাবে কি না শ্মশানে! মনে হচ্ছে তিনি যেন শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের সেই শ্রীকান্ত।

ফজলু মামা আর কথা বাড়ালেন না। শুধু বললেন, ঠিক আছে। তোরা যখন কেউ যাবি না। আমি একাই যাব। বোতলে করে ভূত নিয়েই ঘরে ফিরব।

ফজলু মামা হনহন করে হেঁটে নিচে নেমে গেলেন।

তিনি চলে যাওয়ার পর প্রসূন হেসে বলল, মামা আসলে ভয়ে আছেন। একা যেতে চাচ্ছেন না। তাই বারবার আমাদের নিয়ে মিটিং করছেন।

রাতের খাবারের পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফজলু মামা রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,

আমি রেডি।

ভাগ্নে-ভাগ্নিরা গুডবাই।

আপা-দুলাভাই গুডবাই।

কথা শেষ করেই মামা গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।

ঘড়িতে তখন রাত দশটা।

ফজলু মামা বেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফেরত না আসায় মা কান্নাকাটি শুরু করলেন।

তার একমাত্র ভাই এখনো আসছে না কেন। সে তো পাঁচ মিনিটের বেশি বাইরে থাকেনি কখনো।

মা রাগ করে বাবাকে বললেন, শুধু শুধু দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও ফজলুকে খুঁজে আনো।

বাবা বিড়বিড় করে বললেন, গাধাটার রাতবিরেতে ভীমরতি ধরেছে।

বাবা আর থামলেন না। গেটের কাছে যেতেই রবিন বলল,

বাবা আমিও যাব।

প্রসূন বলল, আমিও যাব।

রতœা বলল, আমিও যাব।

সবাইকে নিয়ে বাবা বের হলেন ফজলু মামার খোঁজে। বেশি দূর যেতে হলো না। পাড়ার মোড়ের কাছাকাছি যেতেই এ পাড়ার রাশেদ ভাইকে আরো দু-তিনজনসহ ফজলু মামাকে ধরাধরি করে নিয়ে আসতে দেখল ওরা।

বাবা বললেন, কী হয়েছে রাশেদ?

রাশেদ ভাই বললেন, আঙ্কেল। ফজলু মামা বিলের ধারে বটগাছটার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে বাদুড় উড়ে যেতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছেন।

ভাগ্যিস আমরা কাছাকাছি ছিলাম।

বাবা তেমন কিছু বললেন না।

শুধু রাশেদ ভাইকে বললেন, আসলেই যখন আর একটু কষ্ট করে বীরপুরুষটাকে তোমরা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসো।

বাবার কথায় জ্ঞানহীন মামাকে নিয়ে সবাই চলল বাড়ির দিকে।

মামার শ্মশান জয় করে বোতলে ভূত ধরে আনার স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close