শাম্মী তুলতুল
আকাশে ওড়ার স্বপ্ন
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের আশপাশেই হৃদয়ের বাড়ি। চারজনের সংসার তাদের। বাবা-মা হৃদয় আর তার ছোট ভাই। বাবার একটি পান দোকান ছিল। কিন্তু ঝড়োহাওয়াই তা ভেঙে যায়। সেই থেকে তাদের অভাবে দিন কাটে। দোকান ভেঙে যাওয়াতে হৃদয়ের বাবা খুব ভেঙে পড়েন। বাবাকে এক দিন মন খারাপ করে থাকতে দেখে হৃদয় বলে বাবা তুমি মন খারাপ করো না, নতুন করে আমরা আরেকটি দোকান বানাব।
বাবা হৃদয়ের কথা শুনে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
হৃদয়ের স্কুলেও যাওয়া হয় না। স্কুলের বেতন দেওয়ার সময় এসেছে, তাই বেতনের ভয়ে হৃদয় আর স্কুলে যায় না। স্কুলের ড্রেস দেখলে তার চোখে জল আসে। পরতে তার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন সে বাড়ির কাজ করত। স্কুলে ঠিকমতো স্যারদের পড়া মুখস্থ দিত। স্কুলের টিফিন ছুটিতে লুকোচুরি খেলা খেলতে গিয়ে কত না হই-হুল্লোড়, চেঁচামেচি করত বন্ধুদের সঙ্গে। তা ভেবে ভেবে নিজের অজান্তেই হেসে উঠে সে। হৃদয় স্বপ্ন দেখত বড় হলে সে পাইলট হবে। আকাশে উড়বে। পাখির সঙ্গে পাল্লা দেবে।
তার এমন স্বপ্নের কথা শুনে বাবা শুধু হাসত। বাবার সে হাসির কোণে কষ্ট লুকিয়ে থাকত। তবু সন্তানের হাসির জন্য তা লুকিয়ে রাখতেন। সন্তানকে নিরাশ করতেন না। তাকে সাহস দিতেন। এক দিন স্কুলের এক বন্ধু পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসে হৃদয়কে দেখতে পেয়ে ডাক দিল। হৃদয় লজ্জা পেয়ে চলে যেতে চাইলে তার বন্ধু তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুই স্কুলে আসিস না কেন এখন?
হৃদয়ের চোখ-মুখ লজ্জায় লাল হতে লাগল, ইয়ে মানে হৃদয়কে আমতা আমতা করতে দেখে জিসান পানির থলে দেখে বলে, পানি বিক্রি করছিস? কী হয়েছে তোর?
হৃদয় মাথা নিচু করে বলে, আমাদের দোকানঘর সব ঝড়-তুফানে উড়ে গেছে। আমাদের খেতে-পরতে খুব সমস্যা এখন।
শুনে জিসানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। জিসানের বাবা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। জিসানকে ডাকতেই জিসান বাবার কাছে এসে সব খুলে বলল। জিসান খুব কাঁদো কাঁদো গলায় বলল কথাগুলো বাবাকে। বাবা জিসানের এমন মানবতা দেখে খুব অবাক হলেন। বাবা জিসানের হাত ধরে হৃদয়ের কাছে এসে বললেন, তোমার বাবা কোথায়?
ঘরে। আমাকে নিয়ে চল তার কাছে।
হৃদয় পথ এগিয়ে নিয়ে তাদের ঘরে জিসান আর তার বাবাকে নিয়ে গেল। ঘর তো আর ঘর নয়, কোনো রকম ছালা দিয়ে ঘেরা ঝুপড়ি।
ঘরে ঢুকতেই হৃদয়ের বাবা সালাম দিলেন। জিসানের বাবা পরিচয় দিয়ে বললেন আমি হৃদয়ের বন্ধুর বাবা। আমি একটা এনজিওতে চাকরি করি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি।
হৃদয়ের বাবার যেন একটু আশার ঝলক। হৃদয়ের বাবা একটা চেয়ার দিয়ে জিসানের বাবাকে বসতে দিলেন। এরপর জিসানের বাবা সব বুঝিয়ে বললেন। কাল থেকে হৃদয় আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করবে। আর আপনি আমাদের সমিতির অফিস থেকে লোন নিয়ে আবার পানের দোকান দেবেন, ঘর বানাবেন। স্বাবলম্বী হওয়ার পর আপনি ধীরে ধীরে টাকা শোধ করে দেবেন।
হৃদয়ের বাবা কী বলে ধন্যবাদ দেবেন জিসানের বাবাকে বুঝতে পারলেন না। ছল ছল চোখে জিসানের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন। আপনার ঋণ আমি শোধ করতে পারব না ভাই।
আপনার জন্য কিছু করতে না পারি, পথ তো দেখিয়ে দিতে পারি।
এমন পথ কজনে দেখিয়ে দেয় বললেন হৃদয়ের বাবা। আমাদের আশপাশের মানুষগুলো অসহায়কে এমন পথ দেখিয়ে দিলে কিছুটা কষ্ট ঘুচত। জিসানের বাবা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। আমি আসি। কাল আপনি আমার অফিসে ঠিক সময়ে চলে আসবেন।
"