অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত
হার্ট অ্যাটাক যখন হয়, তখন নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের মতো উপসর্গ নাও হতে পারে। হতে পারে অন্য রকম উপসর্গ। বুক ভেঙে ব্যথা, একটি বাহু বেয়ে ব্যথা নিচে চলে আসা-এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপসর্গ নাও হতে পারে। অনেক সময় অস্পষ্ট, নীরব উপসর্গ-যা নজরে পড়ে না।
সাধারণত দেখা যায়, ছয় ধরনের উপসর্গ হতে পারে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের সময়। তাই সেসব জেনে রাখা ভালো।
১. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
বুকে ব্যথা হলো সচরাচর উপসর্গ। তবে অনেক নারীর তেমন ব্যথা হতে পারে পুরুষের তুলনায় অনেক কম এবং অন্যরকম। মনে হবে বুক চিপে আসছে, নয়তো বুক ভার ভার লাগছে এবং ব্যথা হতে পারে বুকের যে কোনো স্থানে। কেবল বাম দিকে হবে তাই নয়।
২. ব্যথা হতে পারে বাহু, পিঠ বা চোয়ালে
এমন ব্যথা নারীদের ক্ষেত্রে হয় বেশি। মনে করবেন অনেকের যে ব্যথা হওয়া উচিত বুকে বা বাম বাহুতে, কিন্তু ব্যথা হলো পিঠ বা চোয়ালে। ব্যথা হতে পারে ক্রমে ক্রমে আবার হঠাৎও ব্যথা হতে পারে। কম-বেশি হতে হতে তীব্র হয়ে উঠতে পারে। ঘুমিয়ে থাকলে ব্যথায় জাগিয়ে তুলতে পারে।
৩. পেটের ব্যথা
কখনো কখনো অনেকে পাকস্থলীর ব্যথাকে ভুল করে ভাবেন এটা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা। বুক জ্বালা বা ফ্লুর কারণে এমন ব্যথা হতে পারে। কখনো অনেক নারীর অভিজ্ঞতা এমন হয় যে, পেটে প্রচন্ড চাপ অনুভব করেন।
৪. শ্বাসকষ্ট, বমিভাব, মাথা হালকা বোধ হওয়া
অকারণে যদি শ্বাসক্রিয়াতে খুব কষ্ট হয়, হতে পারে তা হার্ট অ্যাটাকের জন্য। সঙ্গে যদি অন্য দুই-একটি উপসর্গ থাকে, তা হলে সন্দেহজনক। মনে হবে ম্যারাথন দৌড়ে এসেছেন, অথচ বস্তুতপক্ষে একটুও শরীর নাড়ানো হয়নি।
৫. শরীরের ঘাম ঝরা
শরীর শীতল করে অনেকের ঘাম ঝরলে তা নারীর জন্য হার্ট অ্যাটাকের সংকেত হতে পারে। ব্যায়াম করে যে ঘাম হয় বা বাইরে রোদে কাজ করে যে ঘাম তেমন নয়, মনে হবে শরীর মনে খুব চাপ পড়েছে, ঘাম ঝরছে। এ ধরনের হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
৬. ক্লান্তি বোধ হওয়া
যাদের হার্ট অ্যাটাক এমন নারী প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করেন, ধীরস্থিরভাবে বসে আছেন, নড়ছেন না, তবুও খুব ক্লান্ত বোধ করছেন। রোগী বলেন, বুকজুড়ে ক্লান্তি বোধ করছেন। সহজ সব কাজকর্ম করতে পারেন না, এমনকি গোসল করতে যেতেও তারা অসীম ক্লান্তি বোধ করেন। এমন হলেও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। এসব উপসর্গের অভিজ্ঞতা হলে ডাক্তারি সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
উপরে উল্লেখিত যে কোনো উপসর্গে দেরি না করে জরুরিভাবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নিজে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে হাসপাতালে যাবেন না। প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন। বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনও যেন ড্রাইভ করে না নিয়ে যান, কারণ এতে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সুতরাং যা অনুভব করছেন তা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাবেন না। ভুল হলেও লোকে বোকা বললেও লজ্জা পাবেন না। চেকআপ জরুরি, ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক। স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া জরুরি জীবন বাঁচানোর জন্য।
লেখক :
পরিচালক
ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
"