অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম

  ০৮ মে, ২০২৪

হাঁটুর লিগামেন্টের ক্ষতি যেভাবে বুঝবেন

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্থিসন্ধি হলো হাঁটু। কারণ এই হাঁটুর ওপর ভর করে আমরা হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি ওঠাবসা করে থাকি। হাঁটু শরীরের বড় এবং ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাঁটুর জোড়া ওপরের দিক থেকে ঊরুর হাড় বা ফিমার ও প্যাটলা এবং নিচের দিক থেকে পায়ের হাড় বা টিবিয়া- এই তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাস্টিক টিস্যু, যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ার শক্তি দেয় এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

হাঁটুতে চারটি লিগামেন্ট থাকে। সেগুলো হলো- এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, পোসটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, মিডিয়ার কোল্যাটারাল লিগামেন্ট এবং ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট।

লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ : হঠাৎ মোচড়ানো গতি। এতে এনটেরিওর ক্রসিয়েট লিগামেন্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আঘাত, উঁচু কিছু থেকে পড়ে যাওয়াসহ যেকোনো ধরনের পতন, গাড়ি বা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

লিগামেন্টের ক্ষতি হয়েছে, সেটা বুঝবেন যেভাবে : হাঁটুতে ব্যথা তীব্র থেকে ধীরে ধীরে কমে এলে। ব্যথা হাঁটুর বাইরে, পাশে ও পেছনে অনুভূত হলে। হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে গেলে। আঘাতের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে হাঁটু ফুলে গেলে। ফোলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা না গেলে। দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে হাঁটু ছুটে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়া মনে হলে। আঘাতের সঙ্গে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারলে। সঙ্গে মেনিসকাস ইনজুরি থাকলে। অনেক সময় হাঁটু আটকে গেলে। দীর্ঘদিন ধরে লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত থাকলে। উঁচুনিচু জায়গায় হাঁটতে সমস্যা হলে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হলে। হাঁটু ইনসিকিউর বা অস্থিতিশীল মনে হলে।

চিকিৎসা : হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় লাগালে ব্যথা বা ফোলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট অনবরত বরফ লাগাতে হবে।

এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে সেটিকে হার্টের লেভেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফোলা কম হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হতে পারে ৭ থেকে ১০ দিন।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা : প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফোলা সেরে ওঠার পর হাঁটুর বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে লিগামেন্টের ক্ষতি ও তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। এক্স-রে ও এমআরআইয়ের সাহায্য নিতে হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

মনে রাখতে হবে : হাঁটুর লিগামেন্ট নিজে থেকে জোড়া লাগে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাঁটুর পেশির ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ ও ভালো থাকা যায়।

লেখক: এমবিবিএস, ডি অর্থো.অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close