প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার
হাঁটু ব্যথা-কী করি
আমরা প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করি, কেমন আছেন? অধিকাংশ সময়েই উত্তর পাই-আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমি মনে করি, এটি একটি কঠিন উত্তর। ভালো থাকাটাই কঠিন। যে কোনো কারণে আমরা অসুস্থ হতেই পারি। আর ওই অসুস্থতা যদি হয় হাঁটু ব্যথা। হাঁটু ব্যথা আপনার দৈনন্দিন জীবনের অনেক সুখ-আহ্লাদকে কেড়ে নিতেই পারে। প্রিয় পাঠক, আমার এ লেখাটি একটু ভিন্নতর। আজ আমি আপনাদের জন্য লিখেছি হাঁটু ব্যথার সমস্যা নিয়ে। আশা করি আমার এ লেখা আপনাদের উপকারে আসবে।
কাজী আবদুুর রহমান, বয়স ৩৯ বছর। ২ বছর ধরে ডান হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। এখন অন্যের সহায়তা নিয়ে চলতে হয়; যেমন একটি লাঠি ব্যবহার করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি হাঁটেন। তার হাঁটু পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথমেই দেখলাম, ডান হাঁটু অনেকটা উঁচু হয়ে আছে। অর্থাৎ বাম হাঁটু যেমন বিছানায় লেগে আছে, ডান হাঁটু বিছানায় লেগে নেই। উপুড় হয়ে শুইয়ে দুই হাঁটু বাঁকা করে গোড়ালি বাটকের (পেছন) সঙ্গে লাগাতে বলায় বাম পা লাগাতে পারে, কিন্তু ডান পায়ের হাঁটু ৭৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকা করতে পারে না। এ অবস্থাকে আমরা বলে থাকি, হাঁটুর ক্যাপসুলে অসুবিধা বা ক্যাপসুলার প্যাটার্ন। তার ডান হাঁটুর মিডিয়াল হ্যামস্ট্রিং, মিডিয়াল কোয়াড্রেরসিফ অ্যাক্সপানসন, পপলিটিয়াস ও গ্যাস্ট্রোক নিমিয়াসের লং হেডে টেন্ডার। আপনাদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করা যেতে পারে, আমাদের দেশে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৬০ শতাংশ লোক হাঁটু ব্যথায় ভুগে থাকেন। আর এ ব্যথা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
কাজী আবদুর রহমানের জন্য সঠিক চিকিৎসা হবে কনজার্ভেটিভ চিকিৎসা। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। আবদুর রহমানের হাঁটুর সুস্থতার জন্য সঠিক এবং ফলদায়ক চিকিৎসা হবে ফিজিওথেরাপি। তাহলেই আশা করি তার হাঁটুর সমস্যাগুলো চলে যাবে; যেমন ব্যথাযুক্ত টিস্যুগুলোয় ওয়াক্সপ্যাক স্ট্রোকিং করে, সুন্দরভাবে সফট টিস্যু মোবিলাইজেশন করে দিতে হবে। হ্যামস্ট্রিং, গ্যাস্ট্রোক নিমিয়াস, পপলিটিয়াস এবং কোয়াড্রিরসেফ মাসলের স্ট্রেসিং ও স্ট্রেন্দেনিং করতে হবে, বায়োমেকানিক্স অনুযায়ী হাঁটু মোবিলাইজেশন করে হাঁটুকে সম্পূর্ণ বাঁকা এবং সোজা করতে হবে; অর্থাৎ হাঁটুর রেঞ্জ অব মোশন বাড়াতে হবে; সঙ্গে সঙ্গে হোল্ড রিলাক্স এক্সারসাইজ করে মাংসের শক্তি বাড়াতে হবে এবং স্ট্যাবিলাইজড করতে হবে। এর সঙ্গে ইলেকট্রিক্যাল মোডালিটিসের মধ্যে লো-লেভেল লেজারথেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ডথেরাপি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করে রোগীর কষ্ট দ্রুত কমাতে হবে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসা নিলে আশা করি কাজী আবদুর রহমান কষ্টমুক্ত হবেন। এ চিকিৎসার পাশাপাশি তাকে কিছু উপদেশ মেনে চলতে হবে; যেমন সিঁড়িতে ওঠানামা কম করতে হবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় সঠিক থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, আমি আমার ছোট এ লেখার মাধ্যমে ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি, আপনার যদি এ ধরনের হাঁটুর কষ্ট হয় তাহলে আপনি কী ধরনের চিকিৎসা করবেন। মনে রাখবেন, হাঁটু ব্যথা মানেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস নয়। পরিশেষে আপনার হাঁটুর যত্ন নিন, সুস্থ জীবনযাপন করুন।
মাস্কুলোস্কেলিটাল ব্যথা বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
পান্থপথ, ঢাকা
"