মো. আরিফুর রহমান ফাহিম
ব্যথার ওষুধ থেকে আলসার
শরীরের ছোটখাটো সমস্যায় আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে যতটুকু সচেতন হচ্ছে, ঠিক ততটুকু বিপদ ডেকে আনছে নিজেই নিজের চিকিৎসা করে। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হলেও যদি আমরা সচেতন থাকি, তবে অনেক রোগবালাই থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি। আমাদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করে, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে। রোগ যখন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়, তখন আমাদের দৌড় শুরু হয়। ঘরে বসে সবকিছু পাওয়ার দিন এখনও আসেনি, তাই সঠিক পরামর্শের জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়াটা অত্যাবশ্যক। আমরা যে কোনো ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাই আর ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল খুবই পছন্দের ওষুধ। শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা অনুভব করার অর্থ হচ্ছে, সেখানে প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক পদার্থ সংশ্লেষ হচ্ছে আর ব্যথানাশক ওষুধ এ রাসায়নিক পদার্থটির নিঃসরণে বাধা দেয় বলে আমরা ব্যথা অনুভব করি না; কিন্তু প্রস্টাগ্ল্যান্ডিনের একটি ভালো গুণ হলো এটি পাকস্থলীকে অ্যাসিডের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আবৃত করে রাখে। অর্থাৎ আলসার থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। আমরা যখন ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করি, তখন এটি শুধু ব্যথার উৎপত্তিস্থলে প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসরণে বাধা দেয় তা নয়, বরং পুরো দেহে ওষুধটি রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাকস্থলীতে প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসরণে বাধা দেয়। এভাবে আমরা নিজের অজান্তেই ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে অ্যাসিডিটিতে আক্রান্ত হচ্ছি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অ্যাসিডিটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর খাওয়া শুরু করি অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন জাতীয় পেপটিক আলসারের ওষুধ; কিন্তু ব্যথানাশক ওষুধ সেবন বন্ধ করি না। মনে রাখতে হবে, ব্যথা কোনো একটি রোগের উপসর্গ। আমাদের রোগ সারাতে হবে, উপসর্গ সারালে চলবে না। কী কারণে উপসর্গটি হচ্ছে, তা শনাক্ত করে প্রতিকার করলে ব্যথা এমনিতেই ভালো হবে। উপসর্গ থামিয়ে রাখা মানে নিজেই নিজের ক্ষতি করা, কেননা উপসর্গ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় রোগটি শনাক্ত করে চিকিৎসার কথা। চিকিৎসা মানেই ডাক্তারের কাছে যাও, ওষুধ খাওয়া, তা নয়। চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, ব্যথার উৎস জেনে চিকিৎসা করতে হবে। আমরা সাধারণত মাইগ্রেন বা মাথাব্যথা এবং বাতের ব্যথায় বাজারের প্রচলিত সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই খাই আর সে কারণেই রোগের উপসর্গ সাময়িক বন্ধ থাকে; কিন্তু রোগ সারে না, বরং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে নতুন নতুন রোগ জন্ম হয়। তাই সবার উচিত ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন- প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক ইত্যাদি গ্রহণের সময় অ্যান্টাসিড খাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো সঠিক নিয়মে ওষুধ গ্রহণ করা। উপসর্গের সাময়িক চিকিৎসা নয়, রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা হোক আমাদের লক্ষ্য।
লেখক :
সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
"