নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ বিচারপতি আপাতত ছুটিতে
* পদত্যাগ ও অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল * চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি * প্রাথমিকভাবে বিচারিক বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে আপাতত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো বিচারিক বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না, যে কোনো বিচারিক দায়িত্ব পালন থেকে তাদের বিরত রাখা হয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে যে মামলা, তার শুনানি শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই বিচারকদের পদত্যাগ ও অপসারণ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলটিমেটাম ও হাইকোর্ট ঘেরাও করে বিক্ষোভ-মিছিলের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।
১২ বিচারপতির মধ্যে ১০ জনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা গেছে। তারা হলেন বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি ৎশাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আকতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি আতোয়ার রহমান, বিচারপতি খিজির হায়াৎ ও বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার।
আওয়ামী লীগের আমলের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুরে হাইকোর্ট ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছিল বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং।
এসব কর্মসূচি চলার মধ্যেই খবর ছড়ায়, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওই চায়ের দাওয়াতে ছয় জন গিয়েছিলেন এবং ছয়জন যাননি। তবে পরে জানা যায়, ওই ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। এরপরই আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।
গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভস্থলে এসে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা জানান, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের কোনো আইন এই মুহূর্তে কার্যকর নেই। বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে যে মামলা রয়েছে, তার শুনানি হবে ২০ অক্টোবর। ওই সময় পর্যন্ত বেঞ্চ পাবেন না এই ১২ বিচারক।
তিনি বলেন, ওই ১২ জন বিচারপতি যেহেতু নিজেরা পদত্যাগ করেননি এবং যেহেতু তাদের অপসারণ করা যাচ্ছে না, তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের কোনো বেঞ্চ দেওয়া হবে না। তারা বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন না।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ‘আপনাদের যে দাবি, আপনাদের যে লিডার, তারা আমার চেম্বারে বসেছিলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সঙ্গে দুজন সহকর্মী ছিলেন। আপনারা জানেন, বিচারপতির পদত্যাগ বা অপসারণ-এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে দেশে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন বিদ্যমান নেই। বিগত সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা সংশোধনী হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। সেটা আবার সরকার রিভিউ আকারে পেশ করেছে। আগামী রোববার ২০ অক্টোবর সেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগে শুনানি হবে। ১ নম্বর আইটেম রাখা হয়েছে সেটি।’
আজিজ আহমদ ভূঞা আরো বলেন, ‘অন্যদিকে বিচারপতিদের পদত্যাগের আপনাদের যে দাবি, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণের সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে সুপ্রিম কোর্টের, প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয়, উনি সেটা করেছেন। জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থই হলো, তারা এই যে আগামী ২০ অক্টোবর কোর্ট খুলবে, তারা আর বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। ওই মামলাটির (ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ) শুনানি আছে ২০ তারিখে। অ্যাটর্নি জেনারেল সেটি প্লেস করবেন। আশা করছি, এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শুরু হবে। আর বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এককভাবে জড়িত নন; রাষ্ট্রপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও আইন উপদেষ্টা জড়িত আছে। আপাতত ১২ জনকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে বাকিগুলো আপনাদের সামনে আসবে।’
"