নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন ২১১১ জন

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হচ্ছে না

বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ২ হাজার ১১১ জন বাদ যাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক। গতকাল বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আযোজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা আছে। এর চেয়ে কম বয়সি আছেন ২ হাজার ১১১ জন। এরা তালিকা থেকে বাদ যাবেন।’

ফারুক ই আজম বলেন, ‘বহু অভিযোগ আছে। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। আদালত নির্ণয়ের পর এদের সাজার ব্যবস্থা করা হবে। এদের শাস্তি পাওয়া উচিত। নানারকমের তালিকা এখানে আছে। একটু সময় তো লাগবেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়। তবে তাদের একটি সুযোগ দিতে ইমডেমনিটি দেওয়া হতে পারে। তারা যদি স্বেচ্ছায় চলে যান, তাহলে সাধারণ ক্ষমতা পেতে পারেন। তা না হলে তাদের অভিযুক্ত করা হবে।’ রাজাকারদের তালিকা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা আমার কাছে নেই। কোনো ফাইল পাইনি। মন্ত্রণালয়েও এ নথি নেই। তালিকা করতে চাইলেও করা যাবে না। যেভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা এখন করা সম্ভব না। এটা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। ৫০ বছর আগের ঘটনা এখন কে কোথায় আছেন, এটা বের করা অনেক দুরূহ।’

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হচ্ছে না : স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হচ্ছে না। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধদের তালিকা মুক্তযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তিনি বা তার সচিব মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর এরকম কোনো তালিকা পাননি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধদের তালিকা করা অসম্ভব। ফারুক-ই আজম বলেন, ‘যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়েই মন্ত্রণালয় হিমশিম খাচ্ছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক’।

প্রসঙ্গত, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এদেশের রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে; চালিয়েছে নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ৭৮৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ওই তালিকায় জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠকের নামও পাওয়া যায়, যাদের অনেকে আবার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে আসছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত তালিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে রাজাকারের তালিকা সরিয়ে ফেলা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তখন বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে এ তালিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা থাকবে। এরপর ২৭ মাস পার হলেও তালিকা প্রণয়নের কাজই শুরু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close