মাওলানা আমিন আশরাফ

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

আজ মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর

আজ শনিবার দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর। মহিমান্বিত এ রাত মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া বিশেষ নেয়ামত। যদিও রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করার দিক-নির্দেশনা এসেছে, এরপরও সিংহভাগ মুসলিম ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি ‘লাইলাতুল কদর’ পাওয়ার আশায় যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন।

সে হিসেবে দেশব্যাপী আজ দিবাগত রাতে পালিত হবে কাঙ্ক্ষিত পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’। ২৭ রমজানের প্রস্তুতির তারাবির নামাজ পড়ার পর থেকে মুমিন মুসলমান সারারাত জেগে লাইলাতুল কদর পেতে ইবাদত-বন্দেগি করবেন।

পবিত্র কোরআনে কদরের রাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত ১-৫)

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে তার স্ত্রী আয়েশা (রা.) শবেকদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিজি)

লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুণ্যময়ী রজনী এবং এ রাত বিশ্ববাসীর জন্য স্রষ্টার অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়।

শবেকদরের রাতে যেসব আমল করবেন : ১. নফল নামাজ পড়া। ২. মসজিদে ঢুকেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ পড়া। ৩. দুই দুই রাকাত করে (মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ পড়া। ৪. রাতে তারাবির নামাজ পড়া। ৫. শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। ৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবি পড়া। ৬. সম্ভব হলে তওবার নামাজ পড়া। ৭. সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত পড়া। ৮. সম্ভব হলে সালাতুশ শোকর ও অন্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া। ৯. কোরআন তেলাওয়াত করা। সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুলহু সুরা পড়া। ১০. জিকির-আজকার করা। নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-কে কদরের রাতে পড়ার জন্য একটি দোয়া শিখিয়েছেন। তাহলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’ (তিরমিজি, হাদিস ৩৫১৩)

এ ছাড়া এ জিকিরগুলো করা যেতে পারে : ১. সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। (১০০ বার)। ২. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (২০০ বার) ৩. আস্তাগফিরুল্লাহ (কমপক্ষে ৫০০ বার, যত বেশি সম্ভব হয়)। ৪. বেশি বেশি দরুদ পড়া। ৫. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (কমপক্ষে ১০০ বার)। ৬. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।’ (কমপক্ষে ১০০ বার)। ৭. দোয়া ইউনুস। (যত পারা যায়)। ৮. ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (কমপক্ষে ১০০ বার)। ৯. ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ বেশি বেশি পড়তে পারেন। ১০. সুরা ইখলাস যত বেশি পড়া যায়। ১১. সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করা। ইস্তিগফারজাতীয় আমলগুলো রাতের শেষ ভাগে করা যেতে পারে। (জারিয়াত, আয়াত ১৮)। ১২. লম্বা রুকুণ্ডসিজদাসহ তাহাজ্জুদ পড়া। সম্ভব হলে সিজদায় কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া। (জুমার, আয়াত ৯; নাসায়ি, হাদিস ২২০২)। ১৩. সাহরি খাওয়ার আগে মহান আল্লাহর কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়া করা। (বাকারা, আয়াত ১৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৬৭; নাসায়ি, হাদিস ৩১০৮)। ১১. ফজরের নামাজ পড়া। ১২. কোরআন-সুন্নাহ বর্ণিত দোয়াপড়া। ১৩. পরিবার-পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা, কবর জিয়ারত করা। ১৪. বেশি বেশি দান-সদকা করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close