মিজান রহমান

  ০৫ এপ্রিল, ২০২৪

এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপে হার্ডলাইনে আ.লীগ

উপজেলা নির্বাচনকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রেখে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ভোটার অংশগ্রহণমূলক করতে জিরো টলারেন্সে নীতিতে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমপি-মন্ত্রী ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা যাতে কোনোভাবেই এ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সেজন্য হার্ডলাইনে হাঁটছে দলটি। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কেউ কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মূলত আওয়ামী লীগের এ বক্তব্যে উঠে এসেছে এবারের উপজেলা নির্বাচন ভোটরে অংশগ্রহণমূলক করতে দলটি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রায় এক মাস বাকি থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় এরই মধ্যে বেজে গেছে নির্বাচনের ডামাডোল। এবার দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে চারটি ধাপে। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। অন্যদিকে আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচন এমনভাবে করতে চায় দলটি, যা দেশের নির্বাচনের ইতিহাস পাল্টে দেবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এজন্য এবার উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উন্মুক্ত প্রার্থী হওয়ার সুযোগ এজন্য- যাতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় মন্ত্রী-এমপিদের নিজের লোককে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি করানো বা ‘মাই ম্যান’ কালচার ভেঙে দিতে দলের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নির্বাচনে কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের প্রতি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উপজেলা নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের মতামতের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসনও শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কেউ কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনকে একটি মাইলফলক নির্বাচন করতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেজন্য যেকোনো উপায়ে লক্ষ্য অর্জনে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদকের এ কঠোর বার্তা। ঈদের পর যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসবে, তখন উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু নির্দেশনা নয়, এর বাস্তবায়নও করবে কেন্দ্র। দলটি চাইছে, একটি অসাধারণ নির্বাচন আয়োজন যেখানে ভোটার উপস্থিতি, ব্যাপক প্রার্থী অংশগ্রহণ এবং একটি উৎসবের নির্বাচন হোক- যাতে বিশ্বকে দেখানো যায়, বিএনপির নির্বাচন বর্জন একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে কোনো প্রভাব রাখে না, যেমনটি প্রমাণ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এজন্য বড় চ্যালেঞ্জ এমপি-মন্ত্রীরা। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। প্রকাশ্য হচ্ছে তাদের হস্তক্ষেপ। কিছু জায়গায় অভ্যন্তরীণ সংঘাতও হয়েছে। পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়িতে বিনষ্ট হচ্ছে ঐক্য। এসব বিষয় দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা নির্বাচনে আবদুর রাজ্জাক তার খালাতো ভাইকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদারকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এমন ঘোষণায় প্রার্থী হতে আগ্রহী অন্য নেতারা ক্ষোভ জানান। গত ৯ মার্চ বিশেষ বর্ধিত সভায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন অন্য নেতারা নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে ওই সভা ছেড়ে চলে যান। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম। এ ঘটনার পর সেখানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সম্প্রতি ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস ছালামকে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ঘোষণা করেন জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। একক প্রার্থী ঘোষণার পরও চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান। পরে ১৬ মার্চ ধর্মমন্ত্রী ইসলামপুর উপজেলা ডাকবাংলোয় এক বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বসিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি মাইলফলক। নির্বাচন বানচালের বহুমুখী ষড়যন্ত্র ছিল। সেই প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসেছিল এবং নির্বাচনে সুস্পষ্টভাবে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ২টি ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে এবং ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মন্ত্রী-এমপিদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করলেও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close