নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ মার্চ, ২০২৪

পুরস্কার নিয়ে মিথ্যাচারে ড. ইউনূস

এবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিথ্যাচারে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি ফোরামের অনুষ্ঠানের ড. ইউনূসের হাতে একটি রেপ্লিকা তুলে দেওয়ার ঘটনার পর পুরস্কার নিয়ে মনগড়া তথ্যের প্রচারণা শুরু হয়। ‘দ্য ট্রি অব পিস’ হলো ইউনেস্কোর অফিসিয়াল ট্রফি। বিভিন্ন খাতে অসামান্য অবদান রাখায় গুণিজনদের এ পুরস্কার দেয় জতিসংঘের সংস্থাটি।

এর আগে কন্যাশিশু ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার তুলে দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক নিজে। কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই শিল্পকর্মটির নির্মাতা যদি কোনো রেপ্লিকা কারো হাতে তুলে দেন, তাহলে তা কীভাবে ওই সংস্থার পুরস্কার হতে পারে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আর এসব প্রশ্নের অবতারণার পেছনে রয়েছে খোদ ইউনূস সেন্টার। গত ২১ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টার জানায়, একাদশ গ্লোবাল বাকু ফোরামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম দেওয়া হয়, ‘বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে প্রফেসর ইউনূসের বিশেষ ভাষণ, ইউনেস্কো থেকে দি ট্রি অব পিস পুরস্কার গ্রহণ।’ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশ করা হয়। মূলত গ্লোবাল বাকু ফোরামের সম্মেলনের একটি ঘটনা থেকেই ইউনূসের ট্রি অব পিস পুরস্কার পাওয়ার খবরটি ছড়ানো হয়। পরে ইউনেস্কোর কাছে এ বিষয়ে জানতে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।

দ্য ট্রি অব পিস কী : ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতির শুভেচ্ছাদূত হলেন ইসরায়েলের শিল্পী-ভাস্কর হেডভা সের। দ্য ট্রি অব পিস হলো হেডভা সেরের একটি ভাস্কর্য। শিল্পকর্মটি বৈশিষ্ট্য হলো- গাছের ডালে আকাশের দিকে মুখ করে থাকা একটি পাখি, যা জাতিসংঘের শান্তির মূল্যবোধকে প্রকাশ করে। ২০১২ সাল থেকে এটি ইউনেস্কোর অফিসিয়াল ট্রফি হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিকে ইউনেস্কো মহাপরিচালক এ পুরস্কার দেন। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেন ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোবা।

ইউনেস্কোর পুরস্কার নয়, ইউনূস পেয়েছেন শিল্পীর কাছ থেকে রেপ্লিকা : ইউনূস সেন্টার একাদশ গ্লোবাল বাকু ফোরামের সম্মেলনে ইউনূসকে দি ট্রি অব পিস পুরস্কার গ্রহণ করার খবরের প্রচারণা চালায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকু ফোরামে ইউনেস্কোর কোনো প্রতিনিধিই অংশ নেননি। ইসরায়েলি ভাস্কর্যশিল্পী হেডভা সের হলেন নিজামী সেন্টারের ১০৫ নির্বাহী সদস্যের মধ্যে একজন। কাজেই একাদশ ফোরামে তিনি উপস্থিত ছিলেন। কয়েক বছর ধরেই ‘ট্রি অব পিস’র প্রচারণা চালাচ্ছেন শিল্পী হেডভা সের। ইসরায়েলের বাইরেও চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে এ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এর রেপ্লিকা। বাকু ফোরামে ইউনূসের হাতে এ রেপ্লিকা তুলে দেন শিল্পী নিজেই। একই দিনে তিনি আরো কয়েকজনের হাতে তুলে দেন রেপ্লিকা।

পুরস্কার নাকি বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা : সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে চলেছেন ড. ইউনূস। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বন্ধুদের কাছ থেকে বিবৃতি আনা, সেই বিবৃতি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা। আর এসবের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ একজন শিল্পীর কাছ থেকে রেপ্লিকা নিয়ে সেটিকেই অফিসিয়াল পুরস্কার হিসেবে চালিয়ে দেওয়াটা ইউনূসের ধাপ্পাবাজি বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ‘ধরা যাক, স্বাধীনতা পদকের ডিজাইন করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এখন শিল্পী যদি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে তার ডিজাইনের রেপ্লিকা দেন, তাহলে কি তা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তি হিসেবে প্রচার করা যাবে? শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দণ্ড পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির বহু অভিযোগে বহু মামলা রয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক মহলকে ব্যবহার করে আদালত মামলা প্রত্যাহার করার মতো বেআইনি দাবি তুলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এ নোবেলজয়ী। এবারের পুরস্কার নিয়ে ইউনূসের মিথ্যাচারের পেছনে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close