বিশেষ প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

সামনে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পরীক্ষা

ঈদযাত্রায় এবার মহাসড়কে যানজট নিরসন, রেলপথে ট্রেনের টিকিট নির্বিঘ্নে পাওয়া এবং নৌপথে ঝুঁকিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করাই সরকারের কঠিন পরীক্ষা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন মহাসড়কের ১৫৫টি স্থান যানজটের জন্য ঝুঁকিতে আছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এসব স্থান চিহ্নিত করেছে। এ অবস্থায় সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বৈঠকে যানজট নিরসনের জন্য ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী রবিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করবে। তা চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। ফিরতি টিকিট বিক্রি আগামী শুরু করা হবে ৩ এপ্রিল, তা চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। সব টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, টিকিট বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের আসন সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট, রেলসেবা অ্যাপ ও সহজ ডটকমের প্ল্যাটফরম থেকে টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। সার্ভারের ওপর চাপ কমাতে রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট আলাদা সময়ে বিক্রি করা হবে। বাড়ানো হবে বিশেষ ট্রেন। এছাড়া নিয়মিত রুটের ট্রেনগুলোয় কোচ বাড়ানো হবে।

এদিকে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চাঁদাবাজির কারনে মহাসড়কে বাস নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না। সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিআরটিএ ভবন মিলনায়তনে বৈঠকটি হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে পবিত্র ঈদুল ফিতরে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়কারীদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমাদের মনিটরিংয়ে আছে। চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমেরিকায়ও দুর্নীতি হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, চাঁদাবাজি এমন জায়গায় গেছে, আজ প্রধানমন্ত্রীকেও এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। কারণ তার প্রভাব দ্রব্যমূল্যে গিয়েও পড়ছে। মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর ভেতরে গণপরিবহনগুলোর দিকে তাকানো যায় না। তার থেকে মফস্বলের বাসগুলো অনেক উন্নত। রং দিয়ে গাড়ি না চালিয়ে, ফিটনেস নিশ্চিত করার জন্য বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। মন্ত্রী স্বীকার করে বলেন, ঈদের সময় কিছুটা যানজট হবে। একদম যানজটমুক্ত দাবি করা সমীচীন নয়। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে কোনো ভালো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।

সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়টি দুর্ভাবনার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি এখনো চলছে। এতে অনেকের প্রাণহানি হয়। বৈঠকে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে যানজটের কারণে যাত্রীদের প্রচুর ভোগান্তি আমরা দেখতে পাই। তাই এ বছর ঈদের আগে তিন দিন এবং পরে তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান বন্ধ রাখতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ঈদে ট্রাক-ভ্যান বন্ধ থাকলেও প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টস মালামাল, ওষুধ জাতীয় পণ্য, জ্বালানি, সার জাতীয় পণ্যের গাড়িগুলো এর আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে ঈদযাত্রা সামনে রেখে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ৬ এপ্রিল সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। ঈদযাত্রার জন্য ১৩০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে এগুলো চলাচল করবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মহাসড়কের ১৫৫টি স্থানে তীব্র যানজট হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১ ও ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে ৮টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি যানজটপ্রবণ স্থানের মধ্যে আছে- কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব ঢাল, গ্রিন লাইন ইউটার্ন, মদনপুর মোড়, কেওডালা ইউটার্ন, কনকা ইউটার্ন, মোগড়াপাড়া, মেঘনা টোল প্লাজা, সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, সানারপাড় ইউটার্ন, মৌচাক স্ট্যান্ড, দশতলা ভবন, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী রোড ইত্যাদি। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি যানজটপ্রবণ স্থানের মধ্যে আছে- বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোলচত্বর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সি গেটের পূর্বাংশ, ফেন্সি গেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভিভিলা, ঘোলমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ, দাদপুর জামাই রোড।

এছাড়া আরো ঝুঁকিযুক্ত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৬টি যানজটপ্রবণ স্থান হলো- ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, মাস্টারবাড়ী বাজার, সিড স্টোর বাজার, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড। এছাড়া ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, উলাইল বাসস্ট্যান্ড, সাভার থানা স্ট্যান্ড, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবি মোড়, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড ও কালামপুর এলাকাকে যানজটপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close