ঢাবি প্রতিনিধি

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বইমেলা উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানোর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেছেন। রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে এই নিয়ে একুশবারের মতো এই বইমেলার উদ্বোধন করলেন তিনি।

প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘আমি সব প্রকাশককে মুদ্রণ প্রকাশনার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশক হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে আমরা আমাদের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিশ্বমঞ্চেও পৌঁছে দিতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের যুগটা হয়ে গেছে আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। সেজন্য আমি প্রকাশকদের অনুরোধ করব এখন প্রকাশকদের শুধু কাগজের প্রকাশক হলেই হবে না, ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। কাজেই ডিজিটাল প্রকাশনা হলে তা শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিদেশের অন্য ভাষাভাষিরাও আমাদের সাহিত্য পড়বেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুবাদ সাহিত্যে আমি বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই- এক সময় অনেকে দাবি তুলেছিলেন অনুবাদ করা যাবে না কিন্তু আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয় তাহলে বিদেশি এত ভাষার বই আমরা কীভাবে পড়ব? কাজেই যেকোনো ভাষার বইকে অনুবাদ করে এক-একটা দেশ ও সংস্কৃতিকে জানতে।

‘বাংলা একাডেমি একটি আলাদা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করে যত প্রকাশনা হয় সেগুলো ডিজিটালাইজড করে সেটা প্রচার করতে পারে। অন্যান্য ভাষার বই যাতে অনুবাদ হয় সে ব্যবস্থাটা করতে পারলে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরো দ্রুত বিশ্বব্যাপী পৌঁছে নিতে পারব। এই ব্যবস্থাটা আমাদের করা দরকার।’

প্রতি কর্মদিবসে বইমেলা বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা : দ্বিতীয় খণ্ড’ এবং ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’ (বাংলা একাডেমিতে শেখ হাসিনার গত ২০ বারের ভাষণের সংকলন) শীর্ষক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

এছাড়া, উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৬ জনকে ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেন। প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (কথা সাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক ও নাট্য সাহিত্য), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো’ পরিবেশিত হয়। এরপর ভাষাশহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বইমেলা ঘুরে দেখেন।

এবারের মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে।

বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবারও মেলার মূল মঞ্চ হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে। রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় ‘শিশু চত্বর’ স্থাপন করা হয়েছে।

মেলার নিখুঁত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মেলার আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলার মাঠ ও এর আশপাশের এলাকাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

মেলার প্রথম দিনটি ছিল কিছুটা অগোছালো। বইমেলার অধিকাংশ স্টলই এদিন বই সাজানোর কাজ শেষ করতে পারেনি। স্টল নির্মাণ কাজও বাকি অনেক প্রকাশনার।

প্রথম দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, এখনো পূর্ণ অবয়ব পায়নি মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাধিক অংশ। কিছু স্টল-প্যাভিলিয়ন সব কাজ শেষ করে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাকিরা ব্যস্ত ছিল স্টল-প্যাভিলিয়নে বই গোছাতে। কথা প্রকাশ, অন্য প্রকাশ, তা¤্রলিপি, পাঞ্জেরী, কাকলী, অনুপম প্যাভিলিয়ন প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে। অঙ্কুর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দিন জানিয়েছে তার প্রকাশনীর বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ ও প্রস্তুতি এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রথম দিনে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল কম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close