মাওলানা আমিন আশরাফ

  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

আকাশসম পাপও আল্লাহ ক্ষমা করেন

রহমত ও প্রাচুর্যের বসন্তকাল রমজানের আজ দশম দিন। আর এ মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। কাল থেকে শুরু হবে মাগফিরাতের ১০ দিন। অর্থাৎ, ১১ থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত মাগফিরাত, যার অর্থ ক্ষমা।

সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, প্রথম ১০ দিন আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বণ্টন ও বিতরণ করেন। দ্বিতীয় ১০ দিন আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকবেন। শেষ ১০ দিন আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি দিতে থাকবেন।

কাল শুরু হচ্ছে মাগফিরাতের ১০ দিন। রমজান মাসের মাগফিরাত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মাগফিরাত শব্দের অর্থ হলো ক্ষমা। মহান আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলির মাঝে একটি হলো তিনি ক্ষমাশীল। এজন্য আল্লাহতায়ালার অপর একটি নাম হলো ‘আল-গাফুর’। আর ‘গাফুর’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘ক্ষমাশীল’। বান্দা যেন তার সারা বছরের গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, এ জন্য আল্লাহ রমজানের দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাত তথা ক্ষমা লাভের দিন হিসেবে ধার্য করেছেন।’

রমজান মাসের মাঝের ১০ দিন যেহেতু মাগফিরাত বা ক্ষমার, সুতরাং এ ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহর ক্ষমা-সংক্রান্ত নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন এবং অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা। আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তার সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

আল্লাহতায়ালার ক্ষমাসুলভ নামগুলো হলো- আল-গাফিরু (ক্ষমাশীল), আল-গাফুরু (ক্ষমাময়), আল-গাফফারু (সর্বাধিক ক্ষমাকারী), আল-আফুউ (মার্জনাকারী), আল-খাফিদু (বিনয় পছন্দকারী), আশ-শাকুরু (কৃতজ্ঞ), আল-বাররু (সদাচারী), আল-হালিমু (সহিষ্ণু), আস সবুরু (ধৈর্যশীল), আত তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো।’ (বোখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)। আপনি ক্ষমা লাভ করেছেন বা ক্ষমার অধিকারী হয়েছেন, তা বোঝা যাবে আপনার আচরণে যদি ক্ষমা প্রকাশিত হয়, নয়তো নয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি)।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’

এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ বর্জন করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-ইসতেগফার করলে, মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।

ইসলামের প্রাণশক্তি হলো ইমান। ইমানের ভিত্তি হলো ওহি। কোরআন মাজিদ রমজান মাসের শবেকদরে অবতীর্ণ হয়েছে। রমজানের সঙ্গে ইমানের সুদৃঢ় যোগসূত্র বিদ্যমান। ইমানের পরই হলো নামাজ। রমজান মাস হলো নামাজের মাস। যেমন তারাবি বা প্রশান্তির বিশ্রামের নামাজ ও কিয়ামুললাইল বা রাত জাগরণের নামাজের পাশাপাশি রমজানে সাহরির বদৌলতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সহজ হয়; ইশার নামাজ ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি হয়, যাতে সম্পূর্ণ রাত জাগরণের সওয়াব পাওয়া যায়। ইফতার উপলক্ষে মাগরিবের নামাজের জামাতও পাওয়া যায়। অন্যান্য নফল নামাজও বেশি পড়া হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের রহমতের ১০ দিনের মতো মাগফিরাতের ১০ দিনকে যাপন করার তওফিক দিন। আমিন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close