প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই জনগণ যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের চার নম্বর সেক্টরে জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাণিজ্যিক প্লটের খোলা জায়গায় পাতাল রেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাতাল রেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো’ এবং ‘পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো’। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরো এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্যই আমাদের কাজ। আমরা জনগণের সেবক। প্রধানমন্ত্রিত্ব না, সব থেকে বড় কথা আমি জাতির জনকের কন্যা। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমার কাজ। সেটাই আমি করে যাচ্ছি। আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম যদি করোনা অতিমারি না দেখা দিত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে যখন কিছুটা তুলে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি তখন এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। ফলে বিশ্বাবাজারে মূল্যস্ফীতি। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যে গম ২০০ ডলারে কেনা যেত, তা এখন ৬০০ ডলার দিয়ে কিনতে হচ্ছে। যেখানে মাত্র ৮০০ ডলারে জাহাজ পাওয়া যেত, সেই জাহাজ এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার দিয়ে ভাড়া আনতে হচ্ছে। জ্বালানি-ভোজ্য তেল, চিনি, গম সবকিছুই কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দাম দিয়ে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেককে কৃচ্ছ্রতা করতে হবে, সাশ্রয়ী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। যেখানে ১২ টাকা লাগে সেখানে মাত্র সর্বনিম্ন ৩ এবং সর্বোচ্চ ৪ টাকা আমরা নিই; বিরাট ভর্তুকি দিতে হয়। উৎপাদন খরচ দিতে হবে। কৃষি উৎপাদন, খাদ্য উৎপাদনের জন্য যত ভর্তুকি লাগে সেটা আমরা দেব। কিন্তু বিত্তশালীরা সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আমরা তো ৬০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত কোনো দামই ধরি না। কাজেই যারা সাধারণ মানুষ তাদের কোনো সমস্যা হবে না। বরং সবাই যদি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন, যত কম ব্যবহার করতে পারে তত আপনার বিল কম আসবে। পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ এই যুদ্ধের যে দামামা বেজেছে সেটা কবে শেষ হবে জানা যায় না। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ৫ শতাংশ বাড়াই, ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। শীতের সময় ওখানকার মানুষের হিটার জ্বালিয়ে থাকতে হয়। পুরো পরিবার নিয়ে একটা ঘরের মধ্যে কোনো রকমে হিটার জ্বালিয়ে তারা থাকে। আমাদের এখনো সেই দুরবস্থা আসেনি। যা আছে, আমরা যদি হিসাব করে না চলি তাহলে বিপদ আসার সম্ভাবনা। সেজন্য সবাইকে হিসাব করে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আছি, আপনাদের যেন কোনো সমস্যা না হয়-দেখব। কিন্তু আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে। ২১০০ সালের ডেল্টাপ্ল্যান করে দিয়েছি। যাতে এই ব-দ্বীপ জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়। এ দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, আমাদের যে প্রতিশ্রুতি আমরা একে একে তা রক্ষা করি। ২০০৮-এর নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২১-এর মধ্যে রূপকল্প ২১ বাস্তবায়ন করব। সেটা বাস্তবায়ন করেছি আর ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহার সেটা আজকে আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ওই ইশতেহারে ছিল ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করব। আওয়ামী লীগ কথা দিলে কথা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি।

আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। ১০০ সেতু, ১০০ রাস্তা নির্মাণ; এটা কখনো কেউ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, ২০০৮ সালেও ভোট দিয়েছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি। বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ যে নির্বাচন (বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচন) হয়ে গেল সেখানে নৌকা মার্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ প্রার্থী ছিল আর বগুড়ায় ১ প্রার্থী। ঠাকুরগাঁওয়ে দিয়েছিলাম মেনন সাহেবকে, সেখানে জাতীয় পার্টি জিতেছে। আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। বগুড়ার কাহালু নন্দীগ্রামেও আমরা জাসদকে দিয়েছিলাম। জাসদও সেখানে জয়লাভ করেছে আর সদরে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। নৌকা বগুড়ায় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও জয়লাভ করেছে।

দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনাদের সাহস সহযোগিতায় পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি। জনগণের সেবক, জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি। কাজেই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন ওঠে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষের জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। সেই স্বাধীন বাংলাদেশকে উন্নত করব, এখানে দুর্নীতি কীসের! বাংলাদেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারি সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। কাজেই তাদের এই অভিযোগ আমরা গ্রহণ করিনি, চ্যালেঞ্জ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব সেটা আমরা আজকে করে বিশ্বকে দেখিয়েছি বাংলাদেশ পারে। খবর বাসসের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close