বদরুল আলম মজুমদার

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় সংঘাতের শঙ্কা

* সমাবেশের স্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে রশি টানাটানি * আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি বাক্যবাণ * রাজধানীর বাসিন্দাদের উদ্বেগ ও আতঙ্ক

ঢাকায় বিএনপির ঘোষিত সমাবেশকে ঘিরে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে দলটির। সেই সমাবেশ কোথায় হবে তা নিয়ে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। বিএনপি আপাতত নয়াপল্টনের সমাবেশ করার ঘোষণা থেকে সরে এসেছে। তারপরও ভেন্যু বিতর্কের জট খুলছে না।

একাধিক বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে। আর বিএনপিও তাদের পছন্দের স্থানের কথা বলেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে ঢাকার পাড়া-মহল্লায়। পুলিশের পক্ষ থেকে রাজপথে সমাবেশ না করতে দেওয়ার ঘোষণা আছে। অন্যদিকে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান, ধরপাকড়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা। তাই সমাবেশের আগে-পরে কিংবা সমাবেশের দিন নাশকতার আশঙ্কায় ঢাকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।

এদিকে বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতারা ছুড়ে দিচ্ছেন বাক্যবাণ। জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। দুদলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আরো শঙ্কিত করে তুলছে নগরীর বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে মানুষ আতঙ্ক রয়েছে। সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা ও বাড়াবাড়ি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, এটা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। পিছু হটলে চলবে না।

মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি চাইলে রাজধানীর পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে অথবা টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠে আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে পারবে। এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কোনো আপত্তি থাকবে না। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাতে রাজি না হয়ে বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাব করেছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে আরামবাগে বিকল্প ভেন্যুর জন্য মতিঝিল বিভাগের ডিসির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আসেনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিকল্প ভেন্যুর কোনো চিন্তা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাই এখন পর্যন্ত ডিএমপি সেই অবস্থানেই রয়েছে। রাস্তায় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।

এদিকে, গণসমাবেশ নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে দলটি এ দাবি করে। এতে বলা হয়, সারা দেশে বিএনপির দেড় হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের এই ধরনের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করব না। বিকল্প হিসেবে আমরা আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কটি চেয়েছি। আমরা স্থান দেখেও এসেছি। ডিএমপিও স্থানটি দেখেছে। কিন্তু পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি।

পুলিশের বিশেষ অভিযান : সারা দেশে পুলিশের অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি মো. মনজুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০ নভেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালত এলাকায় পুলিশ হেফাজত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা, মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে চলমান অভিযানের পাশাপাশি ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই বিশেষ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ হাজার ৩২১টি অভিযানে ১ হাজার ৩৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩৫৮টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, এ সময় সারা দেশে ২ হাজার ৩২১টি অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close