গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ জুন, ২০২২

স্বস্তিতে কুমিল্লা আ.লীগ শুভেচ্ছায় সিক্ত রিফাত

প্রত্যাশিত জয়ে স্বস্তি ফিরেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয়ে মূলত এ স্বস্তি ফিরেছে। এ বিজয়ের মাধ্যমে নতুন মেয়র হিসেবে আসীন হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। প্রতিদিনই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সরকারের সুপারিশে পৌরসভা বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। নবগঠিত সিটিতে প্রথম ভোট হয় ২০১২ সালে। এ নির্বাচনের ভোটে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বিজয়ী হন। দ্বিতীয় ভোট হয় ২০১৭ সালে; তখনো মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু। এ নিয়ে মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগে গত ১০ বছরে বিরাজ করছিল চরম অস্বস্তি। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত (বাহার-আফজল)। গত সিটির মতো এবারও বিপরীত মেরুতে অবস্থান ওই দুই পরিবারের। ফলে তৃতীয় সিটি ভোটে কষ্টার্জিত জয় হয়েছে নৌকার। লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি।

তৃতীয় দফা সিটি ভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল ঘোষণা করার পর দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে এক কাতারে আনতে কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার সমর্থকদের সমর্থিত ব্যক্তিকে নৌকার প্রার্থী করা হয়। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে প্রভাবশালী এই এমপির। প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারি আফজল হোসেনকে মেয়র পদে প্রার্থী করা হলে এমপি বাহার নাখোশ হন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত নৌকার প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা না করলেও নিজের রাজনৈতিক বলয় ধরে রাখতে কৌশলে সাক্কুকে সমর্থন দেন। ভোটের পর নির্বাচনে ফলে তার প্রতিফলন পড়ে; পরাজিত হয় নৌকা। আফজল খান প্রয়াত হলে দ্বন্দ্ব-বিবাদ না মিটিয়ে দ্বিতীয় সিটি ভোটে তারই মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়। এ ভোটেও পরাজিত হয় নৌকা। টানা দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু। এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন আফজল তনয়া আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও তার ভাই ইমরান।

পটপরিবর্তনে টানা দুবার সিটি ভোটে নৌকা পরাজিত হওয়ার পর এবার এমপি বাহার বলয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের হাতে নৌকা তুলে দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের পুরোনো দ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ক্ষমতাসীন দলের শক্ত একটি পক্ষ বিপরীত রাজনৈতিক প্রার্থীর পক্ষে তাদের অনুসারীদের নামিয়ে দেয় বলেও বাহার বলয় আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, যদিও দুটি পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা ও প্রভাব বিস্তারের কারণে দ্বন্দ্ব প্রকট। একপক্ষ কেন্দ্রের সমর্থন পেলে, অন্যপক্ষের অবস্থান থাকে বিপরীত রাজনৈতিক সমর্থকের দিকে। এবারও ভিন্নতা ছিল না বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। না হলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হতো।

তবে গত দুটি সিটি নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটের চিত্রটা কিছুটা বদলে যায়; দুজন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে। এ সুযোগটা কাজে এসেছে নৌকা জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বলেও স্বীকার করেছেন তারা।

দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ি মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর দেয়াল ঘড়ির সঙ্গে আরফানুল হক রিফাতের নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও বিএনপি সমর্থিত অপর প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ভোট পেয়েছেন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। নৌকা যেখানে ৫০৩১০ ভোট পেয়েছে, সেখানে স্বতন্ত্র দেয়াল ঘড়ি প্রাপ্ত ভোট ৪৯৯৬৭টি। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্র ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ২৯০৯০টি।

তবে গত দুটি সিটি ভোটের তুলনায় সাক্কু ও নৌকার ভোট কমেছে। বিএনপির একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে কুমিল্লায়, সিটি ভোটের ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। সুশীল সমাজের স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিএনপি যদি দ্বিধাবিভক্ত না থাকত, তাহলে নৌকা কোনো প্রতিযোগিতায় থাকত না। এটা স্বীকার করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা। কারণ সুষ্ঠুভাবে সারা দিন ভোটগ্রহণের পর গণনার সময় সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টিতে ৬০০ ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর হঠাৎ করে বাকি চারটিতে ৩৪৩ ভোটে পিছিয়ে পড়াও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি অনেকের কাছে। এরপরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর হ্যাট্রিক বিজয় রথ থামিয়ে নৌকার বিজয় ছিল শুধু মহানগর আওয়ামী লীগের জন্য নয়; কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তির। এ জয়ে ভালোবাসায় ও অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছেন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আরফানুল হক রিফাত। তিনি নিজেও বলেছেন, নৌকার বিজয় হবে আমি আগেই জানতাম। ফলাফল তাই হয়েছে। এটা প্রত্যাশিত ছিল।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কুমিল্লা সিটি গঠন হয় এই সরকারের হাত ধরে। সবাইর প্রত্যাশা ছিল নিজ দলীয় একজন মেয়র হবেন। কিন্তু সেই প্রত্যাশিত জয় পেতে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে। তৃতীয় সিটি ভোটে মেয়র নির্বাচন হওয়ায় কুমিল্লা তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে বলা যায়। সবাইর প্রত্যাশা নৌকার মেয়র প্রার্থী ও সরকার সমর্থিত এমপির হাত ধরে কুমিল্লার উন্নয়ন ঘটবে। আদর্শিক নগর গঠনে এ জয় ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

আর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিব উল্লাহ তুহিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নৌকার জয়ে আমাদের মধ্যে বর্তমানে কোনো হতাশা নেই। নেতাকর্মীরা সবাই আনন্দমুখর সময় পার করছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিল; এ হিসেবে আরো ভালো করা দরকার ছিল; এটা আমাদের অতৃপ্তি। তবে এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। এরপরও অনুশোচনা একটাই, আওয়ামী এন্ট্রি আওয়ামী লীগের ভোটটি আমরা টানতে না পারলেও বিরোধী রাজনৈতিক প্রার্থীরা সেটা পেরেছেন। আগামীতে আমরা চাইব, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে এক ছাতার তলে দেখতে। এজন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে, যোগ করেন এই নেতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close